জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রক্রিয়া আটকে গেছে!

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরও আটকে গেছে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রক্রিয়া। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পায়নি।
সূত্র জানায়, ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জ্বালানি তেলের দাম পর্যায়ক্রমে কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিন ধাপে অকটেন, পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি মোট ২০ টাকার মতো কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে দাম কমানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সে প্রস্তাবে কিছু অস্পষ্টতা থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তা স্পষ্ট করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী আবার প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সে প্রস্তাবে অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ৩ ও ৪ এপ্রিল গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রথম ধাপে দাম কমানো হবে। এ বিষয়ে গতকাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম কমানোর ঘোষণা শিগগিরই আসবে।
তবে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সরকারের মধ্যে অনেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে নন। তাঁরা মনে করেন, তেলের দাম যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, তাতে গ্রাহকেরা একটি স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এখন তেলের দাম কমিয়ে এ স্থিতাবস্থা নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। সরকারের মধ্যকার এই অংশটির কারণেই দাম কমানোর প্রক্রিয়া আটকে থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে ২০১৪ সালের জুন থেকে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত দাম না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিপুল অর্থ মুনাফা করেছে। এ অর্থ দিয়ে সব দায়দেনা পরিশোধ করেও বিপিসির হাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ‘যৌক্তিক’ করার উদ্যোগ নেয়। তার অংশ হিসেবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফার্নেস তেলের দাম কমিয়ে প্রতি লিটার ৬০ টাকার স্থলে ৪২ টাকা করা হয়। এরপর প্রক্রিয়া শুরু করা হয় অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম কমানোর।
দেশে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১২০ মার্কিন ডলার। দেশে তখন দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস তেল ৬০ টাকা করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান দাম (অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল বা ১৫৯ লিটার) অনুযায়ী প্রতি লিটার ফার্নেস তেলের দাম এখন ৩০ টাকারও কম। আর দেশে প্রতি লিটার অকটেনের দাম পড়ছে ৫৫ টাকা। প্রতি লিটার পেট্রল ৫০ এবং প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়ছে ৩৮ টাকার মতো।