লৌহজংয়ে হামলায় শতাধিক হিন্দু পরিবার এলাকাছাড়া

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার পক্ষ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা হিন্দু-অধ্যুষিত পিংরাইল গ্রামে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘গত সোমবার ভাঙচুর ও হামলার খবর শুনে পুলিশ সুপার (এসপি) গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে। মন্দিরের সামান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু পরিবার আতঙ্কে এলাকায় থাকছে না বলে শুনেছি। ঘটনাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এসপির সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অবস্থা দেখতে এবং এলাকাছাড়া হিন্দু পরিবারগুলোকে গ্রামে তুলে দিতে গিয়েছিলাম। আমরা তাদের নির্ভয়ে গ্রামে ফিরে আসতে আশ্বস্ত করি। এসপি সাহেবও তাদের সাহস দেন। তারপরও হিন্দু পরিবারগুলো ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত শনিবার লৌহজংয়ের ১০টি ইউপিতে ভোট হয়। এতে খিদিরপাড়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ব্যাপারীর কাছে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী শাহনেওয়াজ মৃধা পরাজিত হন। এ কারণে শাহনেওয়াজের সমর্থকেরা হিন্দু ভোটারদের ওপর চড়াও হন। তাঁরা সোমবার পিংরাইল গ্রামে হামলা করে ৩০-৩৫টি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় মন্দিরও ভাঙচুর করা হয়। হামলায় কমপক্ষে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হন। তাঁদের মধ্যে কৃষ্ণ পোদ্দার, সুদেব ঢালী, তাপস পোদ্দার, দীন বন্ধু, রিপন মল্লিক, গণেশ রায়, মহাদেব সরকার, সাধনা রানী, গোবিন্দ রায় ও খগেন মল্লিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর থেকে গ্রামের পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ভয়ে গ্রামছাড়া রয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজন সুভাষ সরকার বলেন, ‘নৌকার পক্ষে অবস্থান নেওয়াই আমাদের অপরাধ হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা (বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা) হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। পরাজিত হয়ে এখন বাড়িঘর ও মন্দিরও ভাঙচুর করছে।’

লৌহজং থানার একজন কর্মকর্তা জানান, হামলার ঘটনায় হিন্দু পরিবারগুলো থেকে কেউ ভয়ে মামলা করতে না চাইলে তাদের পক্ষে ওই ওয়ার্ডে জয়ী ইউপি সদস্য রিপন মিয়া বাদী হয়ে সোমবার মামলা করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ সিকদার জানান, খুব শিগগিরই দলীয় সভা ডেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে, তাদের কেউ আওয়ামী লীগের হলে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে শাহনেওয়াজ মৃধার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।