রফিকের উঠে দাঁড়ানোর গল্প

রাঙ্গুনিয়ায় নিজের খামারে হাঁসের খাবার দিচ্ছেন মো. রফিক  প্রথম আলো
রাঙ্গুনিয়ায় নিজের খামারে হাঁসের খাবার দিচ্ছেন মো. রফিক প্রথম আলো

অভাব ছিল মো. রফিকের নিত্যসঙ্গী। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের সংসারে খাবার জোটাতে গাইবান্ধা থেকে ১৯৮৬ সালে কাজের সন্ধানে এসেছিলেন রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায়। উঠে দাঁড়াবেনই—এমন সংকল্প ছিল তাঁর। রফিক তাঁর কথা রেখেছেন। রাঙ্গুনিয়ায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। আর এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে হাঁসের খামারের কারণে।
সফল খামারি: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন চন্দ্রঘোনার ছোট্ট একটি গ্রাম হাজীপাড়া। এখানকার এক ব্যক্তির জায়গা-জমি দেখভাল করার দায়িত্ব পান রফিক। বছর দুয়েক আগে সেখানেই তিন একর জায়গায় শুরু করেন হাঁসের খামার। শুরুতে এক খামারির কাছ থেকে ১২টি বাচ্চা ধার করেন। এখন তাঁর খামারে ৫৫০টি হাঁস। গড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি ডিম বিক্রি করেন। হাঁস ও ডিম বিক্রি করে মাসে আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এর বাইরেও মাছ বিক্রি করে আরও হাজার দশেক টাকা আয় হয় তাঁর। রফিকের পাঁচ মেয়ের একজনের বিয়ে হয়েছে। অন্য চার মেয়ে ও ছেলে কলেজ ও বিদ্যালয়ে পড়ছে। খামারের পাশে তিন গন্ডা জায়গা কিনে মাথা গোজার একটা ঠাঁই করেছেন।
অনন্য দৃষ্টান্ত: চন্দ্রঘোনা এলাকায় দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন রফিক। বতর্মানে তিনি প্রায় সম্পন্ন গৃহস্থ। তাঁর এই পরিবর্তন খামার গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করছে গ্রামের বেকার তরুণদের। হাঁস পালনের পাশাপাশি রফিক এলাকার খালে-বিলে চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত কেজি চিংড়ি মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। এ ছাড়া জমি বর্গা নিয়ে চাষও করেন।
রফিকের বক্তব্য: সম্প্রতি রফিকের খামারে গেলে তিনি জানান, খামারের জন্য হাঁসের এক দিনের বাচ্চা রংপুর থেকে আনা হয়। খাদ্য হিসেবে ধান ব্যবহার করতে হয়। হাঁসগুলো সকালে গুমাই বিলে ছেড়ে দেন তিনি। বিকেলে আবার নিয়ে আসেন খামারে। রফিক বলেন, ‘বিদেশে না গিয়ে একটু পরিশ্রম করলে দেশেই অনেক কিছু করা সম্ভব। আমাকে অনুসরণ করে অনেকে হাঁসের খামার করছেন, এটা দেখে ভালো লাগছে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘রফিকের খামারে হাঁসের কোনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সহযোগিতা করি। তিনি এলাকার তরুণদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’