বাড়ি ফিরতে চায় সুমি ও রেশমী

পাচারকারীর খপ্পর থেকে উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরী সুমি ও রেশমী  প্রথম আলো
পাচারকারীর খপ্পর থেকে উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরী সুমি ও রেশমী প্রথম আলো

আফসানা সুমি ও রেশমী আক্তার দুজনের বয়সই ১০ বছর। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামে পাচারকারীর খপ্পরে পড়েছিল তারা। মাস খানেক আগে পাচারকারীদের কাছ থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেয় কক্সবাজারে অবস্থিত বেসরকারি সংস্থা ইপশার আশ্রয়কেন্দ্র শান্ত নিলয়ে।
সুমির বাড়ি কুড়িগ্রাম আর রেশমীর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তাদের দেওয়া ঠিকানায় অনুসন্ধান চালিয়েও পরিবারের খোঁজ পাননি ইপসার কর্মকর্তারা। বাবা-মায়ের কাছে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে দুই কিশোরী।
গত ২০ নভেম্বর বিকেলে শান্ত নিলয়ে গিয়ে দেখা গেছে, রেশমী ও সুমি মেঝেতে বসে লেখাপড়া করছে। কেন্দ্রের তদারককারী (হাউস মাদার) নাজমা আকতার তাদের পড়াচ্ছেন। পরিবারের কথা তুলতেই দুজনের চোখে নেমে আসে জল। ধরা গলায় সুমি বলতে থাকে, ‘আম্মুর জন্য সব সময় মন খারাপ করে। কিন্তু আম্মু কোথায় জানি না। বাবার ঠিকানাও জানা নেই। তাই বাড়ি যেতে পারছি না।’
রেশমীর অনুরোধ, তাদের ছবি পত্রিকায় ছাপার ব্যবস্থা করা হোক। এতে হয়তো তাদের বাবা-মায়ের চোখে পড়লেও পড়তে পারে।
সুমির দেওয়া তথ্যানুযায়ী তার বাড়ি কুড়িগ্রামের বুড়িবাজারে। বাবা আনসার পেশায় রিকশাচালক। মায়ের নাম সাজিয়া। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে সুমি বড়। টিনের ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘরে থাকে ওরা। ছয় মাস আগে সুমিকে নিয়ে তার মা চট্টগ্রামের হালিশহরে আসেন। সেখানে এক বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য রেখে যান তাকে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে গৃহকর্ত্রী সুমিকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। ব্যস্ত শহরের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে কান্নাকাটি করছিল সে। এ সময় সে এক পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে। পাচারকারীর হাত থেকে সেদিনই পাহাড়তলী থানার পুলিশ সুমিকে উদ্ধার করে এবং পরদিন তাকে কক্সবাজারের শান্ত নিলয়ে পাঠিয়ে দেয়।
একইভাবে মা ও ভাবির সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ায় ফেরার পথে হারিয়ে যায় রেশমী আকতার। গত ১৮ আগস্ট রাতে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ পাচারকারীর খপ্পর থেকে তাকে উদ্ধার করে শান্ত নিলয়ে পাঠায়।
রেশমীর বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকায়। তার বাবার নাম আনু মিয়া, মা পুতনি।
ইপসার কক্সবাজার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ এবং সুমি ও রেশমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা চকরিয়া, চট্টগ্রামের হালিশহর ও কুড়িগ্রামে খোঁজ নিয়েও দুই পরিবারের সন্ধান পাচ্ছি না। যত দিন পরিবারের সন্ধান না মিলবে তত দিন সুমি-রেশমি এখানেই থাকবে। নিজের সন্তানের মতো করে আমরা তাদের মানুষ করব।’