রাজনৈতিক অস্থিরতায় দুর্বিষহ পরিবহনশ্রমিকের জীবন

রাজনৈতিক অস্থিরতায় চরম দুর্দশায় পড়েছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। হরতাল-অবরোধের সময় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে পরিবহনের মালিকেরা ভয়ে গাড়ি নামাচ্ছেন না। গাড়ির চাকা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে পড়ছে পরিবহনশ্রমিকের সংসারের চাকাও।
পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন এক হাজার সিটি সার্ভিস বাস, এক হাজার ২০০ টেম্পো ও সাড়ে সাত হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত তিন মাসে এ সংখ্যা কমে গেছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ভয়ে বেশির ভাগ মালিক গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন।
পরিবহন শ্রমিক সংগঠন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে চলাচলকারী সিটি সার্ভিস বাসগুলোর মালিককে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে চার হাজার টাকা জমা দিতে হয়। টেম্পো মালিকের দৈনিক জমা এক হাজার টাকা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিককে জমা দিতে হয় দৈনিক ৬০০ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে জ্বালানিসহ আনুষঙ্গিক খরচ। এসব পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব শ্রমিকই দৈনিক চুক্তিতে কাজ করেন।
টেম্পোচালক মো. লিটন জানান, স্বাভাবিক সময়ে সব খরচ মিটিয়ে তিনি ঘরে আনতে পারতেন দৈনিক সাড়ে তিন শ থেকে চার শ টাকা। কিন্তু গত দুই মাসের বেশির ভাগ দিনই বেকার থাকতে হয়েছে তাঁকে। আটজনের পরিবারে দুবেলা খাবার জোগাড় করাটাই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।
এ সপ্তাহে চট্টগ্রামে বিরোধী দলের ডাকা দুদিনের হরতাল ও অবরোধে রাস্তায় নামতে পারেনি বেশির ভাগ গাড়ি। চট্টগ্রাম সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, মঙ্গল ও বুধবারের অবরোধে সাড়ে সাত হাজার অটোরিকশার মধ্যে মাত্র ২০০ অটোরিকশা রাস্তায় নামিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেও বেশ কয়েকটি ভাঙচুরের কবলে পড়েছে।
চট্টগ্রাম অটো টেম্পো ড্রাইভার ও সহকারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, পরিবহনশ্রমিক পরিবারে এখন অভাব আর অভাব। বেশির ভাগ শ্রমিকই এ মাসে বাসা ভাড়া দিতে পারেননি। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। গাড়ি মেরামতের কাজ করা শ্রমিকেরাও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। অথচ তারা ব্যর্থ। নিজেদের বাঁচাতে করণীয় নিয়ে প্রতিদিনই মিটিং করছি। আমরা ঠিক করেছি, রাস্তায় গাড়ি নামানোর সময় আমরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে নামব। আমাদের কেউ আক্রমণ করলে আমরাও পাল্টা আক্রমণ করব।’