অবরোধে রেলপথে নাশকতা, আট পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত

চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেললাইনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। ছবি : আলম পলাশ, চাঁদপুর।
চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেললাইনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। ছবি : আলম পলাশ, চাঁদপুর।

সংঘর্ষ, রেলপথে নাশকতা ও ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে ৭১ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলছে। বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত পুলিশের ১১ সদস্য আহত হয়েছেন। রাজশাহীতে পুলিশের এক সদস্যসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ১৮-দলীয় জোট।
নারায়ণগঞ্জ: সকাল সাতটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুরে শিবিরের কর্মীরা একটি ট্রাকে আগুন দেন এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিলে বালুঘাটের শ্রমিকদের সঙ্গে শিবিরের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল পৌনে আটটার দিকে আড়াইহাজারে বিএনপির কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
নোয়াখালী: বেলা ১১টা থেকে হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয়, বিশ্বনাথ, রশিদ কলোনি ও ফকিরপুর এলাকায় প্রধান সড়কে ও আশপাশের সড়কে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি শটগান ও চাইনিজ রাইফেল থেকে ৪০টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের ১২টি শেল ছোড়ে।এতে ১৮ দলের কর্মী-সমর্থক ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।পুলিশ অবরোধকারী সন্দেহে ওই সব এলাকা থেকে ১৫ জনকে আটক করে। দুপুর ১২টার দিকে অবরোধকারীরা শহরের বিশ্বনাথ এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।হামলাকারীরা এ সময় কার্যালয়ের ফটকের ভেতরে রাখা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। 

রাজশাহী: সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নগরের শালবাগান এলাকায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। তাঁরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি, কাঠ ফেলে ও আগুন জ্বেলে অবরোধ করেন। পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে পৌঁছালে অবরোধকারীরা তা লক্ষ্য করে ককটেল, পেট্রলবোমা ও ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে সাঁজোয়া যানে পেট্রলবোমা বিস্ফোরিত হয়ে আগুন জ্বলে ওঠে। গাড়িটি দ্রুত সামনের দিকে টান দিলে বাতাসে আগুন নিভে যায়। সেখানে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক দফা রাবারের বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের পুলিশ লাইন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো ডটকমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান।

নগরের চারখোঁটার মোড়ে পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দাঙ্গা দমন বিভাগের কনস্টেবল রেজাউল করিম গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক রিকশাচালকের পায়ে গুলি লাগে।

সকাল ১০টার দিকে নগরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে রাস্তায় অবরোধকারীরা আগুন জ্বালে ও কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। 

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলিখালী এলাকার মহাসড়কে আজ সকালে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পটুয়াখালীর সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনসার উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে সাতটা থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শর্টগানের ৫০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

চাঁদপুর: সকালে চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেললাইনে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা।এতে স্টেশন এলাকার পাশের রেল ব্রিজে পাটাতনের কিছু অংশ পুড়ে যায়।পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানান, অবরোধে পিকেটিংয়ের সময় চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে আটজনকে আটক করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের সামনে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা।এ সময় ওই পথ দিয়ে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে তারা।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।তবে কাউকে আটক করা যায়নি।কুষ্টিয়া থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।পোড়াদহ-গোয়ালন্দ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বগুড়া: বগুড়া সদর উপজেলার সাতিয়ানতলা এলাকায় গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ৭২ ফুট রেললাইন কেটে ফেলে অবরোধকারীরা। এতে করতোয়া, লালমনি, রংপুর এক্সপ্রেস ও একটি লোকাল ট্রেন আটকা পড়ে। সকাল নয়টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বগুড়া রেলস্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক বেলাল হোসেন প্রথম আলো ডটকমকে জানান, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে রেললাইন কেটে ফেলা হয়। এ কারণে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা সান্তাহার-লালমনিরহাট পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। রেলপথ মেরামত শেষে সকাল নয়টার দিকে এ পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, চারটি ট্রেনে এক হাজারেরও বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীরা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন।

এদিকে, গতকাল রাতে শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল এলাকায় আরটিভির একটি গাড়ি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। তবে চালক কৌশলে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। এ ছাড়া মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে অবরোধকারীরা।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): সকালে মিরসরাই উপজেলার দমদমা এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় রণজিত বড়ুয়ার পরিবার।অটোরিকশাটি সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকায় পৌঁছালে অবরোধকারীরা তাঁদের গাড়িতে হামলা চালায়।এ সময় দুই নারীসহ তিনজন আহত হন।আহত ব্যক্তিরা হলেন চালক সুমন বড়ুয়া, যাত্রী আরতি বড়ুয়া ও মায়া বড়ুয়া।

লালমনিরহাট: সকাল ১০টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার  মহেন্দ্রনগর বাজার এবং বুড়ির বাজার এলাকায় রেল ও সড়ক অবরোধ করতে আসা অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।এ সময়  র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ওপর চারপাশ থেকে ঢিল ছোড়া হয়।এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাব ২৮টি, পুলিশ ৬২টি রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের আটটি শেল ছোড়ে।এ সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্যসহ  উভয় পক্ষে অন্তত ১৬ জন আহত হন।

র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা তাদের দিকে ঢিল ছোড়ার অভিযোগে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ফকিরটারী গ্রামের আবদুর রহমানকে (৫০) ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, রাজশাহী অফিস, পটুয়াখালী প্রতিনিধি, চাঁদপুর প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া অফিস, বগুড়া প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ডু প্রতিনিধি, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ও নোয়াখালী প্রতিনিধি)