ওই তো চন্দ্রমুখী...

চন্দ্রমুখী
চন্দ্রমুখী
‘ওই তো চন্দ্রমুখী। অ্যাই, আসো চন্দ্রমুখী।’ এ কথা বলার পর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বাস্তবতা গ্রাস করল নাজনীনকে। শরীরের প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে বিছানায়-বালিশে মুখ লুকালেন। পাশ ফিরে শুরু হলো আর্তনাদ। সারা ঘরে অভিমান আর ক্ষোভে বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা শুধু কান্নার শব্দ। তারপর আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক। ঘরের ভেতরে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর মুখে কোনো কথা নেই। এই অভিমান ভাঙানোর সাহস কারও নেই। নেই এ কান্নার কোনো সান্ত্বনা। 

‘জনকণ্ঠ’-এর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাজনীন আখতারের একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী না ফেরার দেশে চলে গেছে চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর। সেই দিনই নাজনীন চন্দ্রমুখীর কাছে চলে যাবেন বলে বাসার বারান্দা (রেলিং নেই) থেকে লাফ দেন। তার পর থেকে নাজনীন আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নাজনীনকে দেখতে হাসপাতালে যান আরেক দৈনিকের সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। তাঁর দুই বছরের মেয়ে ইন্দুলেখাকে দেখেই নাজনীন ভাবেন তাঁর চন্দ্রমুখী এসেছে। তারপরই নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তবে নিজের ভুলটা তিনি মেনে নিতে পারেন না।

গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে এভাবেই নাজনীন আখতারের মুখোমুখি হতে হলো।

নাজনীনের মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা জানালেন, এর আগেও ইন্দুলেখাকে দেখে নাজনীন এমন করেছেন। তবে আবার স্বাভাবিক হয়ে ইন্দুলেখাকে আদরও করেছেন। আজও একই চিত্র দেখা গেল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাউন্সিলর খাদিজা আক্তারের প্রচেষ্টায় নাজনীন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলেন। ইন্দুলেখাকে বিস্কুট দিতে বললেন। টুকটাক অনেক কথা বললেন।

নাজনীন যেমন মেয়ের শোক ভুলতে পারছেন না, চোখের সামনে নিজের মেয়ের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেখতে দেখতে নাজনীনের মাও দিন দিন ভেঙে পড়ছেন।

নাজনীন আখতারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে। তবে এখনো একা বসতে পারেন না। বিছানাতে বসেই টয়লেট করতে হচ্ছে। ডান হাত দিয়ে বলতে গেলে কিছুই করতে পারেন না।

নাজনীনের মা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ওর শারীরিক অবস্থা আগে যা ছিল তা থেকে এখন অনেকটাই ভালো। তবে ওর মানসিক যে অবস্থা ... একটু ভালো থাকলে পরেই আবার অস্থির হয়ে পড়ে। সারাক্ষণ চন্দ্রমুখীর গল্প। মানতেই পারছে না চন্দ্রমুখী নেই। ছোট বাচ্চা দেখলেই চিত্কার শুরু করে।’

কেবিনের ভেতরে থাকা নাজনীন ভালো হয়ে উঠছেন তার প্রমাণও পাওয়া গেল। নিজে থেকেই জানালেন, গত কয় দিন ধরে পত্রিকা পড়ছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও কথা বললেন। আবার সাংবাদিকতা কবে থেকে শুরু করবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ সবকিছু ঠিক হয় না। আমার যে অবস্থা তাতে...’ বলেই চুপ করে গেলেন। আবার পর মুহূর্তেই বললেন, ‘আমার শরীর নিয়ে চিন্তাও করি না। ভালো হওয়ারও তাড়া নেই। কী হবে ভালো হয়ে?’

নাজনীনের স্বামী জিটিভির প্রধান প্রতিবেদক রকিবুল ইসলাম জানালেন, নাজনীনের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের আরও উন্নতির জন্য এখানকার চিকিত্সকদের পরামর্শে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে যেতে হবে। সেই যাত্রার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।