ওনারা তো কিছু হারায় না, হারাইলে বুঝত

আগুনে পুড়ে যাওয়া এই ব্যক্তির পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে তোলা। ছবি: হাসান রাজা
আগুনে পুড়ে যাওয়া এই ব্যক্তির পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে তোলা। ছবি: হাসান রাজা

দেশে কেন এত অরাজকতা, কেন এত অশান্তি? ওনারা তো কিছু হারায় না। হারাইলে বুঝত!’—ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চতুর্থ তলায় ব্লু জোনে চিত্কার করে কাঁদছিলেন আর দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ওপর নিজের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন এক নারী। মাঝে মাঝেই মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলাম বংশাল শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা। অফিস শেষে বাসায় ফিরতে গিয়ে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় শিশুপার্কের সামনে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের ২৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।
গাড়ি চালকের সহকারী হাফিজুল ইসলাম (২৫) বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন বইয়্যা থাকলে আমগো খাওয়াইবো ক্যাডা? হ্যাল্লাইগাই কামে বাইর অইছিলাম। অহন চিকিত্সার খরচ দিব ক্যাডা?’
হাফিজুল মনে করে রাজনীতিবিদরা নিজেরা সমস্যার সমাধান না করে খেটে খাওয়া মানুষের ওপর জুলুম করছে। তিনি বলেন, ‘আইজ যারা পুইড়া গ্যাছে হ্যার কী দোষ কইরছে? হ্যারা সবাই তো নিজেগো কাজ কামের লাইগ্যা বাইধ্য হইয়া ঘরের বাইর অইছে। এরা কী ভোটার না? ভোট দিব না?’

ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দেশে আমি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারব না। আতংক নিয়ে থাকতে হবে। রাস্তায় বের হলে ঘরে ফিরতে পারব কী না তার নিশ্চয়তা নেই। এটা আমাদের রাজনীতিবিদরা কী একটু ভাববেন?’ মাসুমা পূবালী ব্যাংক শ্যামবাজার শাখায় কর্মরত। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে দগ্ধ হন মাসুমা। তাঁর শরীরের ১৭ শতাংশ পুড়ে গেছে।

একুশে টেলিভিশনের মুক্ত-খবর অনুষ্ঠানে কিশোরী সুস্মিতা শখ করে সাংবাদিকতা করেন। বড় সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। আজ নিজেই খবরের শিরোনাম হয়ে গেল। তার শরীরের ১১ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার মা গীতা সেনও গুরুতর আহত। মায়ের পুড়েছে ২১ শতাংশ। তাদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন এই অবস্থায়।

আজ বৃহস্পতিবার রাতে পুরো বার্ন ইউনিটের অবস্থাই পুরোপুরি বিষণ্ন। কান্না আর আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের  চিকিত্সক, নার্সসহ সব কর্মীরাই ব্যস্ত আহতদের শুশ্রূষায়। অনেকেরই কোন আত্মীয়স্বজন তখন পর্যন্ত এসে পৌঁছাননি। কাউকে কাউকে খবর দেওয়া হয়েছে। কেউই জানেন না কার অবস্থা কী রকম। বার্ন ইউনিটের পরিচালক ডা. সামন্তলাল সেন বললেন, এখনও বলা যাচ্ছে না কার অবস্থা কেমন। যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের এককেজনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় কয়েকজন চিকিত্সা নিয়ে ফিরে গেলেও ১৮ জন চিকিত্সাধীন রয়েছেন। শুক্রবার প্রত্যেকের অবস্থা সম্পর্কে অনুমান করা যেতে পারে বলে জানালেন সেখানকার চিকিত্সকরা।