ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভাঙচুর, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ

নিজ কলেজের ছাত্রীকে সরকারি ভবনে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অধ্যক্ষ তাঁর বাসভবনের দোতলায় অবরুদ্ধ ছিলেন।
ভবনের বাইরে বিক্ষুব্ধ কয়েক শ সাধারণ ছাত্রছাত্রী ভবনটি ঘিরে রেখেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেন। ওই ছাত্রী কলেজে ক্যাম্পাসের ভেতরে অধ্যক্ষের সরকারি বাসভবনের পাশে একটি ছাত্রীনিবাসে থাকেন।
ওই ছাত্রীর ভাষ্যমতে, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে হোস্টেলের নিয়মকানুন জানানোর কথা বলে অধ্যক্ষ তাঁকে তাঁর বাসভবনে ডেকে নেন। ভবনের নিচতলার ড্রয়িংরুমে ডেকে নানা কথার ছলে একপর্যায়ে অধ্যক্ষ ওই ছাত্রীর শরীরে হাত দেন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তাঁকে দোতলার ঘরেও তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েটি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসে বিষয়টি ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের ও পাশের ছাত্র হোস্টেলে জানান।
এ খবর পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা অধ্যক্ষের বাসভবনে হামলা চালান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসভবনের একতলা ও দোতলায় থাকা রেফ্রিজারেটর, আলমারি, রাইসকুকার, ড্রেসিং টেবিলসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ভেঙে তছনছ করেন। এ সময় অধ্যক্ষ দোতলার একটি কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় অধ্যক্ষের বাসভবনে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ছিলেন না। তাঁরা ঢাকায় গেছেন। ঘটনার সময় অধ্যক্ষ বাসভবনে একাই ছিলেন। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা বাসভবনের সামনে অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।
শ্লীলতাহানির শিকার ছাত্রী আরও জানান, মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি কলেজ হোস্টেলে সিট পেয়েছেন। হোস্টেলে মুঠোফোন ব্যবহারের নিয়ম না থাকলেও তিনি বাড়ির লোকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি ফোন কিনেছেন। এ নিয়ম ভাঙার অভিযোগে অধ্যক্ষ বিকেলে তাঁকে কলেজের দপ্তরির মাধ্যমে বাসভবনে ডেকে পাঠান। সে সময় বাসভবনে গার্ড থাকলেও অধ্যক্ষ তাঁকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। অধ্যক্ষ তাঁকে হোস্টেলের নিয়ম মেনে চলতে বলেন। পরে এমন বাজে আচরণ করেন।
তবে অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি হোস্টেল থেকে একটি মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য তিনি মেয়েটিকে তাঁর বাসভবনের ড্রয়িংরুমে ডেকেছিলেন। তিনি ওই ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব বা গায়ে হাত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষের বাসভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। মেয়েটির লিখিত অভিযোগ পেলে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।