ফেনীতে নির্বাচনী সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ

ফেনী সদর উপজেলায় চারটি ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন চলাকালে আজ শনিবার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের আশপাশে সংঘর্ষ ও প্রতিপক্ষের ছররা গুলিতে ১০ জন আহত হয়েছে। দুটি ভোট কেন্দ্রে গোলযোগ ও দখল ঠেকাতে পুলিশকে ২৪টি রাবার বুলেট ছুড়তে হয়। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেলের স্প্লিন্টারে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগে বিএনপির মনোনীত একজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। জাল ভোট প্রদানের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত দুজনকে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

ফেনী সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ছরোয়ার জাহান বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এসেছেন। তবে সবাই আশঙ্কামুক্ত।

ভোটার, প্রার্থী ও প্রশাসনের ভাষ্যমতে, আজ সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জগন্নাত সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থীর সমর্থদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় সদস্য প্রার্থী মো. শাহজাহান, তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা ও সমর্থক আমান উল্যা, জয়নাল আবদীন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। সকালে একই ইউনিয়নের শুভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন গোলাম মালান।

মুহুরীগঞ্জ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হকের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর দাবি, হামলাকারীরা সবাই বহিরাগত।

এ ছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছররা গুলিতে কবির আহম্মদ, মো. মুছু মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও বাবুল গুলিতে আহত হয়।

ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের অলিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে সকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বিনিময় হয়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ শটগানের ১০টি গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তদের ককটেলের স্প্লিন্টারে পুলিশের উপপরিদর্শক মো. ইয়াসিন আহত হয়। তাঁকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত ব্যক্তিদের দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন জসিম দুপুর ১২টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা আগের রাত থেকে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেন।

লেমুয়া ইউনিয়নের কেরনিয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ব্যাপক ককটেল ফাটিয়ে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং শটগানের ১৪টি গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত থেকে সব এলাকায় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগত দলীয় নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। রাতে বিভিন্ন এলাকায় ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।

ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. আমিরুল আলম অলিপুর ও কেরনিয়া ভোট কেন্দ্র এলাকায় ২৪টি শটগানের গুলি ছোড়া ও ককটেলের স্প্লিন্টারে একজন উপপরিদর্শক আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন।