শ্বশুরবাড়ি গেলেন সোমা-পারভীন

বাঁ থেকে সোমা ও আবদুর রশিদ এবং ইকবাল ও পারভীন। ছবি: মো. সাদ্দাম হোসেন
বাঁ থেকে সোমা ও আবদুর রশিদ এবং ইকবাল ও পারভীন। ছবি: মো. সাদ্দাম হোসেন

ঢুকতেই ফটকে রঙিন কাপড়ের বিশাল তোরণ। ভেতরে ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে দুটি গাড়ি। বেশ উচ্চ শব্দে বাজছে গান। আরও একটু ভেতরে চলছিল মিষ্টি বিতরণ, ছবি তোলা। সঙ্গে মহাভোজ। হইহুল্লোড় আর নাচানাচিতে পরিবেশটাই অন্য রকম।

খুলনা নগরের গোয়ালখালীতে সরকারি দৃষ্টি ও বাক্‌শ্রবণ-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের (শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র) মিলনায়তনের চিত্র এটি। আজ শনিবার দুপুরে এই বিদ্যালয়ের দুজন বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী সোমা খাতুন ও পারভীন আক্তার কনের বেশে লাজুক মুখে বসেছিলেন বিয়ের মঞ্চে। আর শেরওয়ানি ও মাথায় পাগড়ি পরে সেজেছিলেন বর আবদুর রশিদ ও ইকবাল হোসেন। তাঁরাও বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কনে সোমার বাড়ি বরিশালের মুলাদি উপজেলায় এবং পারভীনের খুলনা নগরের তেলিগাতী মহেশ্বরপাশা এলাকায়। দুজনই পাঁচ বছর ধরে দৃষ্টি ও বাক্‌শ্রবণ-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে (শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র) আছেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমার সঙ্গে খুলনা নগরের খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকার আবদুর রশিদের এবং পারভীনের সঙ্গে সাতক্ষীরার বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ইকবালের বাগদান সম্পন্ন হয়। আবদুর রশিদ খালিশপুরে নিজেদের খাবারের হোটেলে বাবার সঙ্গে আছেন। আর ইকবাল একটি এনজিওতে চামড়ার সেকশনে কাজ করেন।

এই বিয়ের মূল উদ্যোক্তা কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি এই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ছিলেন। সদ্য তিনি অন্যত্র বদলি হন। তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে এই চারজনের বাগদান হয়। আজ বিয়ে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রতিবন্ধীদের বিয়ের ঘটনা এটাই প্রথম। তিনি আরও বলেন, মেয়েদের খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়নি। দেওয়া হয়েছে শো-কেস, আলমারি, খাট, লেপ-তোশক। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ নিজে উপস্থিত থেকে দুই দম্পতিকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও কিছু উপহার দেন। বিয়েতে আসা অন্য অতিথিরাও কিছু উপহার দিয়েছেন।

খাবারে তালিকায় ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরু-খাসির রেজালা, দই, মিষ্টি ও পান-সুপারি।

বাঁ থেকে সোমা ও আবদুর রশিদ এবং ইকবাল ও পারভীন। ছবি: মো. সাদ্দাম হোসেন
বাঁ থেকে সোমা ও আবদুর রশিদ এবং ইকবাল ও পারভীন। ছবি: মো. সাদ্দাম হোসেন

বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ আবদুল হামিদ, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, খুলনা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পারভীন আক্তার, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম, সহকারী পরিচালক কানিজ মোস্তফাসহ আমন্ত্রিত ২০০ অতিথি। বিয়েকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১২৩ জন শিক্ষার্থীও মেতেছিল অন্য রকম আনন্দে।