সোনাইমুড়ীতে ১৫ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথ। ব্যালটে আগেই নৌকা প্রতীকে সিল মারা ছিল। ছবিটি গতকাল সকাল ১০টায় তোলা l প্রথম আলো
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথ। ব্যালটে আগেই নৌকা প্রতীকে সিল মারা ছিল। ছবিটি গতকাল সকাল ১০টায় তোলা l প্রথম আলো

এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৮টি ইউনিয়নের ১৫টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা।
বেলা সোয়া ১১টায় নদনা ইউনিয়নের দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র আচার্য (৩২) দুর্বৃত্তদের ককটেল হামলায় আহত হন। এ ছাড়া নান্দিয়াপাড়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. নোমান (২২) নামের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অম্বনগর ইউনিয়নের উত্তর অম্বনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, নদনা ইউনিয়নের দক্ষিণ শাকতলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাষীরহাট ইউনিয়নের কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের ওপর পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উত্তর অম্বনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী রেজাউল হকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
সরেজমিনে সকাল পৌনে নয়টায় বজরা ইউনিয়নের বজরা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ বুথে অল্প কয়েকজন ভোটার থাকলেও নারী বুথগুলো প্রায় ভোটারশূন্য। বিভিন্ন বুথে নৌকার সমর্থকদের ভোটারদের হাত থেকে ব্যালট ছিনিয়ে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা যায়। এ নিয়ে অনেক ভোটার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দুজন কলেজছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রথমবার ভোট দিতে এসেছি, কিন্তু কেন্দ্রে যে পরিবেশ দেখেছি, তাতে ভবিষ্যতে আর ভোটকেন্দ্রে আসার আগ্রহ হবে না।’
সকাল ১০টায় নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও নৌকার এজেন্টরা ভোটারদের হাত থেকে ব্যালট নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ফেলছেন। এ কেন্দ্রের একটি নারী বুথে নৌকার প্রতীকে আগে থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার ভোটারদের হাতে দিতে দেখা যায়। এখানে ধানের শীষের এজেন্ট ছিল না।
দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ কে এম সিরাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুর্বৃত্তরা ককটেল হামলা চালায়। এ সময় তারা ভেতরে ঢুকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে শুরু করে। পরে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র আচার্য আহত হয়েছেন।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে সোনাপুর ইউনিয়নের একটি, নদনা ইউনিয়নের দুটি, অম্বনগর ইউনিয়নের চারটি, চাষীরহাট ইউনিয়নের একটি, দেওটি ইউনিয়নের একটি, জয়াগ ইউনিয়নের একটি, নাটেশ্বর ইউনিয়নের দুটি, বজরা ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রসহ মোট ১৫টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল হক ও বিএনপির ইউপি নির্বাচন সমন্বয়ক মাহমুদ হাসান অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে এবং গতকাল ভোরে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ এজেন্ট কেন্দ্রে যেতে পারেননি। আর যাঁরা গেছেন, তাঁদেরও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল হক। তিনি বলেন, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সোনাইমুড়ীর প্রতিটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির প্রার্থীরা পরাজয় নিশ্চিত জেনে এখন অপপ্রচারে নেমেছেন।
জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণে ১৫টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা।