দেড় কোটি টাকায় তিন খুনের আপসরফা?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামে পৃথক সংঘর্ষে তিন ব্যক্তি খুনের ঘটনায় সালিসে প্রায় দেড় কোটি টাকায় আপসরফা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা সালিস বসিয়ে সেসব খুনের ঘটনায় আপসরফা করেন। সাদেকপুর গ্রামে এক বছরে ওই তিন খুনের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ২৬ অক্টোবর খুন হন নাছির উদ্দিন। এ ঘটনায় এলাকার স্থানীয় সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি মামলা হয়। ইকবালের ভাই মিজানুর রহমান এই মামলার দুই নম্বর আসামি।
নাছির হত্যার জের ধরে গত ১৮ অক্টোবর ইকবাল হোসেন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল মিয়া নিহত হন। সামসুল হত্যার ঘটনায় শওকত আলীকে প্রধান আসামি করে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে এবং ইসমাইল হত্যার ঘটনায় আবদুস সালামকে প্রধান আসামি করে ১১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মীমাংসা করতে এক মাস ধরে এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তৎপরতা চালান। গত শনিবার তারা স্থানীয় ধামচাইল বাজারে সালিস বৈঠকে বসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সভায় অন্যদের মধ্যে সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা হামিদুল হক ওরফে হামদু ও বিএনপি নেতা সায়েদুল হক সাঈদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার দুপুর দুইটায় শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত সালিস চলে। তালিকাভুক্ত প্রায় ১৬০ জন সর্দার আপসরফার দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে জুরি বোর্ডে অংশ নেন ৪৫ জন। তারা প্রতি খুনের জন্য ৪০ লাখ টাকা করে জরিমানা নির্ধারণ করেন। এর বাইরে ঘটনার সময় ভাঙচুরের জন্য ইকবাল হোসেনকে ১০ লাখ টাকা এবং আবদুল হাইকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বিএনপি নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, মোট হিসেবে ইকবাল হোসেনের পক্ষকে ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আবদুল হাইয়ের পক্ষকে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা পরিশোধের জন্য দুই মাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এভাবে কোনো হত্যাকাণ্ডের মীমাংসা করা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নূরে আলম বলেন, ‘আমরা হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে এই রায় দিয়েছি। এ ধরনের রায়ের কারণে তারা ভবিষ্যতে আর অপরাধ করবেন না বলে মনে করছি।’
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের সব জায়গাতেই এভাবে হত্যার আপসরফা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম বলেন, এ ধরনের খুনের ঘটনার আপসরফা আইনত বৈধ নয়। এ ধরনের নজির খুনের মতো জঘন্য অপরাধকে উৎসাহিত করবে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আপস-নিষ্পত্তির বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ঘটনায় আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। বিচারাধীন মামলা নিজ গতিতে চলবে। এমন আপসরফা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়।’