পিটিয়ে নরসিংদীতে সহপাঠী, কেরানীগঞ্জে ভাইকে হত্যা

নরসিংদীতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেরানীগঞ্জে জমিজমার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছেন ভাই। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা দুটি ঘটে।
নরসিংদীর ঘটনাটি ঘটে গতকাল দুপুরে জেলা শহরের পশ্চিম ব্রাহ্মন্দী খালপাড় এলাকায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম পারভেজ মিয়া (১৩)। সে শহরের বিলাসদী এলাকার মো. সাত্তার মিয়ার ছেলে। একই ঘটনায় আহত হয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার সহপাঠী নুরুল আমিন (১৩)। দুজনই নরসিংদী আইডিয়াল হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল দুপুরের খাবারের (টিফিন) বিরতির সময় পারভেজ ও নুরুল বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম ও রোমান মিয়া এবং অষ্টম শ্রেণির বায়েজিদ ভূঁইয়া দুজনকে ডেকে পশ্চিম ব্রাহ্মন্দী খালপাড় এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে চার-পাঁচজন মিলে পারভেজ ও নুরুলকে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে খালের পানিতে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান। পরে পারভেজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে পারভেজের মৃত্যু হয়। নুরুল এখনো নরসিংদী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এম এন মিজানুর রহমান বলেন, মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পারভেজের মৃত্যু হয়েছে। শক্ত কিছুর আঘাতে তার মাথার বাঁ দিকের খুলির হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। নুরুলের শরীরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সন্ধ্যার পর চেতনা ফিরলেও আতঙ্কিত থাকায় ঘটনার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনজিল এ মিল্লাত প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন শিক্ষার্থীর বাড়িই খালপাড় এলাকায়। তাদের ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে স্কুল থেকে বিদায় করা হয়েছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন তিন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের লোকজন বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছে।
কেরানীগঞ্জে খুনের ঘটনাটি ঘটে গতকাল সকাল আটটার দিকে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. আলম (৪৪)। তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বলসতা গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে। পেশায় কৃষক আলমের দুই মেয়ে রয়েছে।
আলমের স্ত্রী নিলুফা বেগম (২৬) বলেন, জমিজমার মালিকানা নিয়ে কয় দিন ধরেই তাঁর স্বামীর সঙ্গে বড় দুই ভাই ফোরকান ও মজিবরের ঝগড়া-বিবাদ চলছিল। গতকাল সকাল আটটার দিকে আবার ঝগড়া বাধে। একপর্যায়ে মজিবর ও ফোরকানসহ কয়েকজন মিলে আলমকে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেদম পেটান। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। প্রথমে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে মারা যান আলম। হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে নেওয়া হয়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এখনো মামলা হয়নি।
গাজীপুরে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার: গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নোয়াগাঁও এলাকার চিলাই নদ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (৫৫) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর পরনে গোলাপি রঙের ফতুয়া ছিল।
জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নদীতে লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী থানায় খবর দেয়। সন্ধ্যায় অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিন-চার দিন আগে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয়।