কর্ণফুলীর পাড়ে প্রাণের মেলা

কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত মেল­ায় চলে জমজমাট বিকিকিনি l জুয়েল শীল
কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত মেল­ায় চলে জমজমাট বিকিকিনি l জুয়েল শীল

ঠা ঠা রোদ। গরমের তীব্রতায় কাবু সবাই। কিন্তু এর উল্টো চিত্র কর্ণফুলী পাড়ে। গরম উপেক্ষা করে ভর দুপুরেই হাজারো মানুষের ভিড়। কেউ নাগরদোলায় চড়ছে। কেউ মেলায় জিনিস কেনায় ব্যস্ত। এ চিত্র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত দুদিনের মেলার শেষ দিনের।
দখল-দূষণের হাত থেকে কর্ণফুলীকে বাঁচাতে দক্ষিণপাড়ের চরপাথরঘাটার সিডিএ মাঠে এ মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে ২০০৭ সাল থেকে।
শুধুই কি মেলা! দুদিনের আয়োজনে ছিল পালাগান, আঞ্চলিক গান, লোকজ নৃত্য, বাউল গান, সাম্পান শোভাযাত্রা ও সাম্পান বাইচ। দুই পাড়ের মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করেছেন এসব আয়োজন
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে সাম্পান বাইচ। গত মঙ্গলবার নদীতে সাম্পান বাইচ দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ দুই পাড়ে সমবেত হয়েছিলেন। অনেকে নদীতে নৌকাযোগেও ভিড় করেছিলেন প্রতিযোগিতা দেখতে। তাঁরা উৎসব আনন্দ ভাগাভাগির পাশাপাশি কর্ণফুলী দখল–দূষণ মুক্ত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সাম্পান বাইচে এবার সাতজন মাঝির নেতৃত্বে সাতটি সাম্পান অংশ নেয়।

মারমা নাচ পরিবেশন করেন এক শিল্পী
মারমা নাচ পরিবেশন করেন এক শিল্পী

সাম্পান বাইচে অংশ নেওয়া তাহের মাঝি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে এই নদীতে সাম্পান চালাই। এখন আমাদের দুটি ঘাট বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে আমাদের রুটি–রুজি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সাম্পান বাইচে অংশ নিয়ে আনন্দ করার পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছি। একই সঙ্গে নদীটি বাঁচানোর দাবিও আমাদের।’
সাম্পান বাইচ শেষে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। নাগরদোলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। সেখানে শিশু–কিশোরদের পাশাপাশি রয়েছেন তরুণ-তরুণীরাও।
শারমিন নামের এক তরুণী বলেন, প্রতিবছর আমাদের এই পাড়ে দুই দিনব্যাপী মেলা বসে। বাড়ির সবাই এই মেলায় যোগ দেয়।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, রকমারি জিনিসের পণ্যে ভরপুর প্রতিটি দোকানে। এতে রয়েছে হাতপাখা, খেলনা, খাবার থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র।
গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবের প্রথম দিন ছিল পালাগানের আসর। ওই আসর নদী অঞ্চলের মানুষ দারুণভাবে উপভোগ করে। পালাগান পরিবেশন করেন গায়ক বাচ্চু, হামিদ ও তাঁদের দল। একই দিন নদী ও ঘাট রক্ষার দাবিতে কর্ণফুলী নদীতে সাম্পান শোভাযাত্রাও হয়।
উৎসবের শেষ দিনে সনজিত আচার্যের পরিচালনায় মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া থেকে আগত শিল্পী কোহিনুর আক্তার। এ ছাড়া নজর কাড়ে খাগড়াছড়ির শিল্পীদের নৃত্য।