রেজাউল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পুলিশ ‘খুব কাছাকাছি’ এসেছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ‘অতি শীঘ্রই’ হত্যাকারীদের জনগণের সামনে হাজির করার আশ্বাসও দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই কথা জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।

আজ শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক-ছাত্র-সুধী সমাবেশে’ তাঁরা এ কথা জানান। অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই সমাবেশের আয়োজন করে। রেজাউল হত্যাকাণ্ডের ২২তম দিনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে বেলা একটায় আয়োজিত সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও সহউপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বক্তব্য দেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব কাছাকাছি এসেছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা অনেক কিছুই এখন বলব না। তবে আপনাদের এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা খুব শীঘ্রই এই হত্যাকারীদের আপনাদের সামনে হাজির করব এবং বিচারের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে বা করার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘আমি দিনক্ষণ টাইম উল্লেখ করে কোনো ওয়াদা করব না। তবে পুলিশের প্রতি আস্থা থাকতে হবে। তদন্তে আমাদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আমরা একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি। অতি শীঘ্রই, আমি আবার বলছি, অতি শীঘ্রই আমরা হত্যাকারীদের আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হব।’ যেকোনো ঘটনায় তদন্তকালে কোনো তথ্য–উপাত্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ পাবলিকলি নীরবতা পালন করতে পারে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা নীরব নই।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যে বিষয়ে আমরা আজ এখানে একত্র হয়েছি, এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। কিন্তু বারবার আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমরা শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়; কোনো প্রান্তেই আর কোনো রক্ত ঝরুক তা চাই না।’ দেশের শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষকদের আতঙ্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভীত হবেন না। কারণ আপনারা ভীত হয়ে গেলেই তারা বিজয়ী হয়ে যাবে। আপনাদের ভয় দেখানোর জন্যই এই কাণ্ডগুলো করা হচ্ছে। আপনারা যদি ভীত হন, যদি সরে যান, তাহলে সামনের দিনে আমরা কেউই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা খান্ত হব না। আপনারাও হবেন না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ইংরেজি বিভাগের সভাপতি মাসউদ আখতার, অধ্যাপক রেজাউলের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, আখতার জাহানসহ রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক রেজাউলের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে মন্ত্রীরা নগরের শালবাগান এলাকায় অধ্যাপক রেজাউলের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।

গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় অধ্যাপক রেজাউলকে নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই তাঁর ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন।