'ভোট আসি হামার হইছে যন্ত্রণা'

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ২৭২ জন প্রার্থী। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা। ২৮ মে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন কুর্শা, সয়ার, ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি ও আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৩১, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬২ ও সদস্য পদে ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থীরা দিন-রাত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। গভীর রাতে বিছানায় গেলেও সকালেই আবার বের হয়ে পড়ছেন।

মেনানগর গ্রামের ভোটার মামুন সরকার বলেন, ‘ভাইজান, চেয়ারম্যান-মেম্বর প্রার্থীর যনতোনায় (যন্ত্রণা) হামরা ঘরোত ঠিক করি ঘুমিবার পায়ছি না। দুপুর রাইতোতও ঘুম থাকি ডাকে ভোট চায়ছে।’

পোদ্দাপরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সুলতানা খাতুন বলেন, ‘ভোট আসি হামার হইছে যন্ত্রণা। আইতো (রাত) প্রার্থীর জন্য দরজা খুলি থাকিবার নাগেছে। এক প্রার্থী ভোট চেয়া যাবার পর আর এক প্রার্থী আসি দরজা ঠেলোছে। দরজা খুলি কথা না কইলে যাবার চায় না।’

সরকারপাড়া গ্রামের আরেক ভোটার মন্টু মিয়া বলেন, ‘দিনে মাইকের আওয়াজে কান ভোঁতা হয়া যায়। রাইতোত প্রার্থীর জ্বালায় ঠিক করি ঘুমাবার পাইছি না।’

গতকাল রোববার সকাল সাতটায় ইকরচালী ইউনিয়নের বরাতি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় জাপা-সমর্থিত প্রার্থী মোবারক হোসেন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতে সময় কম। তাই দিন-রাত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার লাঙল মার্কায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছি। জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে গত পাঁচ বছর ইকরচালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এবারও ভোটাররা আমাকে নিরাশ করবে না।’

ওই দিন সকাল নয়টায় ইউনিয়নের একমাত্র নারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমেনা বেগম মিষ্টিকেও মণ্ডলপাড়া গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের কাছে তাঁর আনারস প্রতীকে ভোট চাইতে দেখা গেল। এ সময় তিনি বলেন, ‘জীবন চলার পথে অনেক লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। নারীরা সাধারণত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। মুখ বন্ধ করে থাকে। এই সীমাবদ্ধতার বাঁধ ভেঙে দিতে প্রার্থী হয়েছি। নারীরাই আমার একমাত্র ভরসা।’

সয়ার ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন আজম বলেন, ‘ভোটের বেশি সময় নেই। আমার মার্কা চেনার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি। ভোটাররা আমাকে ভোট দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’

আলমপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান বলেন, ‘গত পাঁচটি বছর আমি জনগণের সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে থেকেছি। এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমি এবার নির্বাচিত হলে আলমপুর ইউনিয়নকে আদর্শ ইউনিয়ন হিসেবে উপহার দেব।’