তনুর বাবা-মায়ের চোখে ঘুম নেই

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানার পর গত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন তাঁর বাবা, মা ও ছোট ভাই।

একমাত্র আদরের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে—এমন তথ্য জেনে তনুর বাবা-মা কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। কেঁদেছেন ছোট ভাইটিও।

পরিবারটির দাবি, এখন দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।

আজ মঙ্গলবার সকালে তনুর মা আনোয়ারা বেগম, বাবা ইয়ার হোসেন ও ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন জানার পর তাঁদের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাঁরা জানান। একই সঙ্গে তনু হত্যার বিচার দাবি করেন।

তনু হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি গতকাল নিশ্চিত করে, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে।

মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে মোট চারজনের ডিএনএ প্রোফাইলের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রোফাইল তনুর রক্তের। বাকি তিনটি প্রোফাইল পৃথক তিনজনের। পরীক্ষায় এই তিনজনের বীর্যের আলামত পাওয়া গেছে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। যে বা যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিচার ও শাস্তি চান তিনি।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ভেতরটা কী যে করে! আমি ঘুমাতে পারি না। গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারি নাই।’

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনও গত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন বলে জানান।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের সঙ্গে তিনি একমত। সিআইডির প্রতি তাঁর আস্থা আছে। এখন তিনি তনু হত্যার দ্রুত ও সঠিক বিচার চান।

ইয়ার হোসেন বলেন, ‘অপরাধী যে হোক, আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমরা এ বিচারের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেব না। কোনো আপস নেই।’

তনুর বাবা বলেন, তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অযৌক্তিক। শিগগির দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া দাবি জানান তিনি।

গত ২০ মার্চ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের একটি জঙ্গলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। এরপর থেকে ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশব্যাপী নানা ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ ও আন্দোলন হয়।

এ ঘটনায় তনুর বাবা মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।

তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মর্গে। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, তনুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি।

প্রতিবেদনে তনুর মাথার পেছনের জখমের কথা গোপন করা হয় এবং গলার নিচের আঁচড়কে পোকার কামড় বলে উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দ্বিতীয় দফা লাশের ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।

গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। তখন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তনুর শরীর থেকে কিছু নমুনা নেওয়া হয়েছিল। গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

গত ১ এপ্রিল মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের কাছ থেকে সিআইডিতে স্থানান্তরিত হয়।

তনুর মা গত ১০ মে সাংবাদিকদের ও সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, সেনানিবাসের ভেতরে তনুকে হত্যা করা হয়েছে। সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ তনুকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর আর তনু ফিরে আসেননি। ওই দুই সেনাসদস্য এ হত্যায় জড়িত বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন...
ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে