বিএনপি ঠেকাতে জামায়াতের সঙ্গে আ.লীগের 'সমঝোতা'

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোহাম্মদ আবদুল জলিল সরে দাঁড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। ২৮ মে পঞ্চম দফায় উপজেলার আটটি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কাহালু উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী আবদুর রশিদ বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে ‘গোপন আঁতাত’ করে সাতটি ইউপিতে জামায়াতের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ করে দিতে মুরইল ও কালাইয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে জামায়াত।
বিএনপির চারজন নেতা ও তিনজন প্রার্থীর অভিযোগ, ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের হলেও কাহালুতে জামায়াতের সঙ্গে অন্য রকম সখ্য আওয়ামী লীগের। জোটের ভোট জামায়াতের বাক্সে টেনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে পাঁচ ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। আবার আওয়ামী লীগের বিজয়ের পথ সুগম করতে দুটি ইউপি থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। যে পাঁচটি ইউপিতে জামায়াত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেগুলো হলো কাহালু সদরে উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল মোমেন, বীরকেদারে জামায়াতের সদস্য মোসলিম উদ্দিন, নারহট্টে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. শহীদুল্লাহ, মালঞ্চায় উপজেলা কমিটির বায়তুল মাল সম্পাদক আবদুল গনি ও জামগ্রামে জামায়াতের সদস্য আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া জামগ্রামে জামায়াতের বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন কমিটির সাবেক আমির মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।
মুরইল ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম, দলের সিদ্ধান্তেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমার চাচাতো ভাই। গতবার তিনি তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পরিবারের সবাই এসে বলল “ভাইকে ছাড় দাও”, তাঁর প্রতি উদারতা দেখালাম।’
উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুস সাহিদ বলেন, মুরইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতি উদারতা দেখিয়ে জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন এটা সত্যি। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত হয়নি।
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নারহট্টের তেঁতুলিয়াপাড়ায় ভোট চাইছিলেন বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মোমিন। তিনি বলেন, বিএনপির জয়ের পথে কাঁটা বিছাতেই গোপন আঁতাত করে জামায়াতের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগেও অস্বস্তি: দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারটি ইউপিতে দলের পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। কাহালু সদরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পি এম বেলাল হোসেনকে মনোনয়ন দেয়নি দল। এখানে দলের প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক। পি এম বেলাল হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।
কালাই ইউপিতে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য উপজেলা ও জেলা কমিটি সুপারিশ করেছিল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল হোসেনকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি মনোনয়ন দিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম খন্দকারকে। এখন রুবেল হোসেন ছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু তাহের সরদার।
পাইকড় ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিটু চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য নাছির উদ্দিন। মুরইলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বগুড়া শহর যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মকিবুল ইসলাম।
কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মনোনয়ন-বাণিজ্য ও জামায়াতের সঙ্গে সখ্যর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্রোহীরা নৌকার প্রার্থীদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। পাঁচ বিদ্রোহীর মধ্যে চারজনই যুবলীগের সঙ্গে জড়িত। দল তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শ মিলে না। তাদের সঙ্গে সখ্যর প্রশ্নই আসে না।