সাভার ও সরাইলে হামলায় নিহত ২

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিতে শহীদুল্লাহ (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় মোবাশ্বের মিয়া (২২) নিহত হয়েছেন।

গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ফরিদপুরে অন্তত ১০ জন এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে পাঁচজন আহত হয়েছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এ নিয়ে সারা দেশে অন্তত ৭৩ জন প্রাণ হারালেন।

ঢাকার বাইরে প্রথম আলোনিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সাভার: সাভারের কাউন্দিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান ও তাঁর লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শান্ত খানের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন ১০-১২ জন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাইফুল আলম ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শান্ত খান তাঁর চাচাতো ভাই।

শান্ত খান বলেন, রাত নয়টার দিকে ইউনিয়নের আলী আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি পথসভা করছিলেন। এ সময় সাইফুলের লোকজন হামলা চালান। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদুল্লাহ মারা যান। দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এ ব্যাপারে সাইফুলের মুঠোফোনে রাত একটার দিকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরে সংযোগ বন্ধ করে দেন। সাভার মডেল থানার এএসপি রাসেল শেখ বলেন, সাইফুল ও তাঁর গানম্যানকে অস্ত্রসহ পুলিশ হেফাজনে নেওয়া হয়েছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বৃহস্পতিবার রাতে নিহত মোবাশ্বের মিয়া সরাইলের পাকশিমূল ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি উপজেলার অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্র বলেছে, গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পাকশিমূল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়নাল মিয়ার কাছে হেরে যান কামাল উদ্দিন। ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জয়নালের সমর্থকেরা বিজয় মিছিল করার সময় কামালের সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় জয়নালসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন কামাল। বৃহস্পতিবার জয়নালসহ ওই মামলার আট আসামি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। রাতে বাড়ি ফেরার পথে কামাল ও তাঁর সমর্থকদের হামলার শিকার হন মুক্তি পাওয়া আটজনসহ জয়নালের সমর্থক সেলিম মিয়া, মোবাশ্বের ও তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হক। হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মোবাশ্বের। আহত হন মোজাম্মেল ও সেলিম। রাতেই কামালসহ ৩১ জনকে আটক করে পুলিশ।

মোবাশ্বেরের চাচাতো ভাই কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে কামালের পক্ষে কাজ না করায় মোবাশ্বেরসহ অনেকের ওপর কামাল ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ জন্যই তাঁকে খুন করা হয়েছে।’

তবে সরাইল থানা-হাজতে থাকা কামাল উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামলার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। ঘটনা শুনে বাড়িতে যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে আসে।’

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপক কুমার সাহা বলেন, গতকাল সকালে জেলা সদর হাসপাতালে মোবাশ্বেরের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাঁর বুকে বল্লমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কামাল উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে গ্রেপ্তার ৩১ জনসহ ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০-৩০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহত মোবাশ্বেরের বাবা আবদুর রাজ্জাক।

ফরিদপুর: পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের বাউষখালীতে গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নুরুল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি খন্দকার সাইফুর রহমানের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সুনামগঞ্জ: স্থানীয় সূত্র বলেছে, গতকাল বিকেলে জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউপি নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। কলকলিয়ার সাদীপুর বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপক কান্তি দের সমর্থক ফখরুল ইসলাম ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হাসিমের সমর্থক মকসুদ আহমদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

তবে জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুরসালিন বলেন, তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। পুলিশ গিয়ে বিষয়টি দেখে এসেছে।