সভাপতি-সম্পাদকের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

তাঁদের দুজনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল আগে থেকেই। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে টানাপোড়েন আরও বাড়ে। এবার তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাঁরা দুজন হলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। এর মধ্যে জাফর আলম উপজেলা পরিষদের ও গিয়াস উদ্দিন ফাঁসিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান।
এই দ্বন্দ্বের উনুনে আরও ঘি পড়েছে ১৭ মে। সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি জাফর আলমকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এই বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছেও পাঠানো হয়। এ নিয়ে চকরিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাফর আলম বলেন, ‘অব্যাহতি দিলে শেখ হাসিনা দেবেন। নিচের লোক (সাধারণ সম্পাদক) কীভাবে আমাকে অব্যাহতি দেন? বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নেতা-কর্মীরাই হাসাহাসি করছেন। আমি বলতে চাই, বিষয়টি মনগড়া ও হাস্যকর।’
সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ জনের কার্যকরী কমিটির ৪৩ জনের মতামতের ভিত্তিতে তাঁকে (সভাপতি) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সভাপতি জাফর আলমকে বাদ দিয়ে সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে ‘কার ভূমিকা কী ছিল’ তা নিয়ে ফাঁসিয়াখালীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ১৬ মে জরুরি সভা ডাকেন গিয়াস উদ্দিন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সরওয়ার আলম। সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোকতার আহমদ চৌধুরী, ফজলুল করিম, ছৈয়দ আলম, এম আর চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য কমর উদ্দিন, আওয়ামী লীগের নেতা শফিউল আলম, আবু মুছা, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। সভায় বক্তারা সভাপতি দলের বিপক্ষে নেতিবাচক কর্মকা‌েণ্ড জড়িত বলে অভিযোগ আনেন। তাঁরা বলেন, ইউপি নির্বাচনে তিনি (সভাপতি) বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করেছেন।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘নেতাদের এসব বক্তব্য রেজল্যুশন করে জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই সভার পর থেকে নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম আর চৌধুরী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। নেতা-কর্মীরা এখন অস্ত্রের রাজনীতি থেকে মুক্তি চাইছেন, আমরা ভালোবাসার রাজনীতি দিয়ে তাঁদের মুক্ত করব।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম আর চৌধুরী হুমকি-ধমকির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন উল্লেখ করে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ১৭ মে ফাঁসিয়াখালীতে সভা শেষে গিয়াস উদ্দিনের পক্ষের নেতা-কর্মীরা কাকারা ইউনিয়নের শাহ ওমর মাজারে মধ্যাহ্নভোজের কথা ছিল। অন্তত ১০০ জন নেতা-কর্মী সেখানে খেতে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী শাহ ওমর মাজারে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন বলে অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দিন পক্ষের কর্মীরা। ওই সময় ভাঙচুর করা হয় ডেকচি-চেয়ার-টেবিল। পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় মাছ-মাংস। ওই সময় মারধরে আহত হন চারজন নেতা-কর্মী।
এ ব্যাপারে জাফর আলম বলেন, ‘সভাপতির অনুপস্থিতিতে সভা ডাকা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র সমর্থন করে না। সুতরাং ওই সভা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভিত্তি এত নড়বড়ে নয়। আমি মাঠের নেতা। নেতা-কর্মীরাই আমার শক্তি, তাঁরাই এসব ষড়যন্ত্রের জবাব দেবেন। দলের ভেতরে গ্রুপিং না করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। ভাঙচুরের বিষয়ে জাফর আলম বলেন, ‘আমাকে বাদ দিয়ে সভা ডাকার খবরটি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। আমি তাঁদের শান্ত করতে শাহ ওমর মাজারে যাই। জাস্ট এইটুকুই।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘চকরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখনো আমরা (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক) একত্রে বসতে পারিনি। বসে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।’