আইএসের দায় স্বীকার, সূত্র পায়নি পুলিশ

মীর সানাউর রহমান হত্যা
মীর সানাউর রহমান হত্যা

কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান (৫৮) হত্যার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। নিহতের স্বজনেরাও বুঝে উঠতে পারছেন না, পরোপকারী ও নির্বিবাদী এই মানুষটিকে কেন দুর্বৃত্তরা নিশানা করল।
সানাউরকে হত্যার ১৮ ঘণ্টার মাথায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইনটেলিজেন্সের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সাইট ইনটেলিজেন্স জঙ্গিগোষ্ঠীর অনলাইনকেন্দ্রিক তৎপরতার ওপর নজরদারি করে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত দুইটার দিকে এক টুইটার বার্তায় জানায়, আইএসের নিজস্ব সংবাদমাধ্যম আমাক বলছে, কুষ্টিয়ায় খ্রিষ্টধর্মীয় ভাবধারার সমর্থনে কাজ করায় আইএসের যোদ্ধারা বাংলাদেশের ওই চিকিৎসককে হত্যা করেছে।
তবে বাংলাদেশের পুলিশ আগের অন্যান্য ঘটনার মতো এ ঘটনায়ও আইএসের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইএস যে দাবি করছে, এর কোনো সত্যতা নেই।
আইএসের দাবির কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নিহত সানাউরের পরিবারের সদস্যরাও। তাঁর ভাই মীর আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই বাউলভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি খ্রিষ্টধর্মীয় ভাবধারা বা এমন কোনো কিছুতে ছিলেন না।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিশিরমাঠ এলাকায় সানাউরের বাগানবাড়ির কাছাকাছি একটি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল নির্মিত হচ্ছে। ওই স্কুলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তাও প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের সঙ্গেও সানাউরের কোনো রকম সম্পর্ক নেই।
সানাউরের একমাত্র ছেলে মীর পাভেল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে পত্রিকার এ ধরনের হত্যার খবর পড়ে বিস্মিত হতাম। আমার বাবা এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’ পাভেল একটি চা-বাগানের ব্যবস্থাপকের চাকরি করেন।
এদিকে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শুক্রবার ঘটনার পর বলছিলেন, সানাউরের বাগানবাড়ির জমি নিয়ে কোনো বিরোধ, পূর্বশত্রুতা বা রোগী দেখার ক্ষেত্রে নারীঘটিত কিছু আছে কি না, তদন্তে এসব সন্দেহকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে পুলিশের এই বক্তব্য মানতে রাজি নন মীর আনিছুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারও সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের জমি নিয়ে বা ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে কোনো বিরোধ নেই। রোগী দেখা নিয়েও কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি, বরং এলাকার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করত।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার এ রকম বলতেই পারে। তবে পুলিশ সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত করছে।
কুষ্টিয়া শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় সানাউর তাঁর বাগানবাড়িতে প্রতি শুক্রবার গ্রামের মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতেন। গত শুক্রবার সকালে মোটরসাইকেলে সেখানে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তাঁর সঙ্গী কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামানকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। সাইফুজ্জামান এখন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পৌর কবরস্থানে সানাউরের দাফন সম্পন্ন হয়। বিকেল পাঁচটায় খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকার সাধারণ মানুষ।
আনিছুর রহমান গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে সড়কের পাশে একটি কাশবনে তাদের রক্তমাখা চাপাতি, পাঞ্জাবি, পায়জামা ও প্যান্ট ফেলে যায়। এর কিছুদূর পর কবুরহাট এলাকায় তারা কয়েকটি বোমাও ফেলে যায়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ওই বোমারই একটির বিস্ফোরণে এক স্কুলছাত্র নিহত ও দুজন আহত হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।