রেলওয়ের জায়গায় দেড় হাজার অবৈধ স্থাপনা

উত্তরা ২ নম্বর সেক্টরের রেললাইনের ওপারে দক্ষিণখান, বিপজ্জনকভাবে রাখা মালামাল, পেছনেই স্থাপনা। শুক্রবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো
উত্তরা ২ নম্বর সেক্টরের রেললাইনের ওপারে দক্ষিণখান, বিপজ্জনকভাবে রাখা মালামাল, পেছনেই স্থাপনা। শুক্রবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো

একদিকে উত্তরা, অন্যদিকে দক্ষিণখান। মাঝখানে রেললাইন। দুই পাড়ে অন্তত দেড় হাজার দোকান, হোটেল, কারখানা ও বস্তিঘর। এর মধ্যে অবৈধ দোকান, হোটেল ও কারখানার সংখ্যাই এক হাজারের মতো। জায়গার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গত শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণখান প্রান্তে রেললাইন ঘেঁষে বিপজ্জনকভাবে রাখা হয়েছে চিলতে কাঠের বেশ কয়েকটি বড় বস্তা। পেছনে লিয়াকত স মিল। মিলের পাশেই তাদের পাকা ভবন। স মিলে গিয়ে মালিককে পাওয়া যায়নি। রহমান নামের এক কর্মী বলেন, জায়গাটি রেলওয়ের নয়, তাঁর মালিকের। সে জন্য তিনি এখানে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন।
পাশেই ‘সুপার ডোর’ নামে একটি দরজা-জানালার দোকান। তারপর টঙ্গী সেতুর দিকে প্রায় ৩০০ ছোট দোকান। যেগুলো উত্তরায় কসাইবাড়ি খালেও পড়েছে। শীর্ণকায় এই খালটিকে এখন নর্দমা বলা যায়।
উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে ২ নম্বর সড়কে রেললাইন থেকে ৩০ গজ পর্যন্ত রেলের জায়গা। এর সীমানা চিহ্নিত করা আছে। দেড় বছর আগে দুই প্রান্তেই রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল। দক্ষিণখান প্রান্তে আবার স্থাপনা গড়ে ওঠে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর প্রান্তে আবার যাতে স্থাপনা গড়ে না ওঠে, সে জন্য বিভিন্ন ভবনের ভাঙা ইট ও আস্তর খণ্ড (রাবিশ) ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে বিভিন্ন কারণে ভবন বা দেয়াল ভাঙা হয়। সেগুলোর রাবিশ এখানে ফেলা যায়। ফলে ২ নম্বর সড়কে রেলওয়ের জায়গা আর দখল হয়নি। কিন্তু ২/ই শাখা সড়কে বেশ কিছু দোকান তৈরি হয়েছে। দোকানগুলো এমন বিপজ্জনকভাবে তৈরি হয়েছে যে দোকান থেকে নামলেই রেললাইন। ওই শাখা সড়কের বাসিন্দা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রশিদুল আলম বলেন, অনেক সময় ট্রেন খুব কাছে চলে আসার পর রেললাইনে দাঁড়ানো ক্রেতারা টের পান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন।
উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের পেছনে রেললাইনের ধারে দোকানপাট ছাড়াও রয়েছে গরুর খামার। ৮ নম্বর সেক্টর এবং টঙ্গী সেতুর উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত দোকানপাট, হোটেল, প্লাস্টিক কারখানা। বিপরীত দিকে দক্ষিণখান প্রান্তে এ ধরনের শত শত স্থাপনা।
৪ নম্বর সেক্টরে মেসার্স আমিনুল হক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. খুরশিদ হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ে প্রায় দেড় বছর আগে অভিযান চালানোর পর দীর্ঘ বিরতিতে আবার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অপর একজন ব্যবসায়ী মো. জসীম বলেন, কসাইবাড়ি খালটি আগে ৩০ ফুটের ওপর ছিল। সেখানে কয়েক বছর আগেও নৌকা চলাচল করত। ভরাট করে দোকানপাট করার পর কোনো কোনো স্থানে খালটি তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে গেছে।
বস্তির বাসিন্দারা ভাড়া দেন: উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ২/ই সড়কে রেললাইনের জায়গায় গড়ে উঠেছে জামতলা বস্তি। এখানে অন্তত দেড় শ ঘর। সামনে দোকানপাট। বস্তির ছয়জন বাসিন্দা বলেন, তাঁদের ঘরপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। রাসেল ও রাজীব নামের ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে দুই ব্যক্তি তাঁদের থেকে ভাড়ার টাকা নেন। তবে খোঁজ করেও এলাকায় তাঁদের পাওয়া যায়নি।
বস্তিতে বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর জন্য প্রতি রাতে ২০ টাকা করে দিতে হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেনারেটর ছাড়াও বিদ্যুৎ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়েও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পানির ব্যবস্থা নেই। বস্তিবাসী পানি সংগ্রহ করেন উত্তরায় ওয়াসার পাম্প বা জলাশয় থেকে। বেশির ভাগ ঘরে চুলা জ্বলে লাকড়িতে।
‘১০ নম্বর রোড বস্তি’ নামে আরেক বস্তিতে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, এখানে মাদকের রাজত্ব চলছে অনেক দিন ধরে। রেললাইন ধরে ৬ নম্বর সেক্টরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও বেশ কয়েকটি বস্তিঘর। ওই বস্তিকে ঘিরেও মাদক ব্যবসা জমে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বস্তিবাসী জানান, রহমত, মোছাদ্দেকসহ কয়েকজন লোক এখানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁরা মূল ব্যবসায়ী নন। খুচরা বিক্রেতা। ওই বস্তির বাসিন্দারা জানান, বস্তিঘরগুলো রেলওয়ের জায়গায় পড়েছে বলে তাঁরা পরে জেনেছেন। তবে ঘর ভাড়া নিয়মিতই দিচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে রেলের ধারের অবৈধ স্থাপনা নিয়মিত উচ্ছেদ হচ্ছে। গত রোববারও অভিযান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উত্তরা ও টঙ্গীতেও হবে।