হাতিরঝিলে বাস কম, গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তি

হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিসের বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও সময়মতো বাস আসে না। এদিকে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ছবিটি গতকাল বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিসের বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও সময়মতো বাস আসে না। এদিকে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ছবিটি গতকাল বিকেলে তোলা l প্রথম আলো

প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী হাতিরঝিল হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া-আসা করেন। যাত্রীদের পরিবহনের জন্য থাকা ছয়টি বাস তাঁদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। তাই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালে ৩০২ একর জমির ওপর হাতিরঝিল প্রকল্পের সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর প্রায় তিন বছর ধরে এই এলাকার দুই পাশের ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় কোনো গণপরিবহনের ব্যবস্থা ছিল না।
গণপরিবহন না থাকায় প্রকল্প এলাকা দিয়ে যাতায়াতে রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, গুলশান, নিকেতন, তেজগাঁও, মধুবাগ, মহানগর প্রজেক্ট, উলন ও মগবাজারের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কেউ হেঁটে, আবার কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে যাতায়াত করতেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে শতাধিক মাইক্রোবাস হাতিরঝিল এলাকায় যাত্রী পরিবহনের কাজ করেছে। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর চালু হয় বাস সার্ভিস।
হাতিরঝিলে গণপরিবহনব্যবস্থা চালুর পর থেকে এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তি কাটছে না। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে না পারায় বেড়েছে ক্ষোভ।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে যাত্রী বেশি হলে বাসের সংখ্যা বাড়াতে। জনগণের সেবায় যেহেতু বাস সার্ভিস চালু হয়েছে, প্রয়োজনে বাস বাড়ানো হবে। রমজান মাসে হাতিরঝিল এলাকায় বাস বাড়ানোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জামাল আক্তার জানান।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত হাতিরঝিলের বাস কাউন্টারগুলোতে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কাউন্টারে ৫০ থেকে ৭০ জন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। ১৫ থেকে ২৫ মিনিটি পর একটি বাস আসে, তাতে ২৭ জন যাত্রী সিটে বসতে পারেন এবং ১০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারেন। বাস ভর্তি হয়ে ছেড়ে গেলেও দেখা যায় তখনো অনেক যাত্রী বাসে ওঠার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
রামপুরা থেকে প্রতিদিন কারওয়ান বাজারে যাতায়াত করেন নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আগে ভরসা ছিল প্রাইভেট কার ও কিছু মাইক্রোবাস। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। তাই যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।’
রাজউক সূত্রে জানা যায়, হাতিরঝিলে চক্রাকার বাসের ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা। বাস ছাড়ে রামপুরা ব্রিজ থেকে। মহানগর প্রজেক্ট ও মধুবাগ হয়ে এফডিসি ক্রসিং পর্যন্ত চারটি বাস চলাচল করে। ভাড়া ১৫ টাকা। আবার এফডিসি ক্রসিং থেকে বেগুনবাড়ী, কুনিপাড়া, গুলশান শুটিং ক্লাব, পুলিশ প্লাজা এবং মেরুল বাড্ডা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত একই ভাড়া। আরেক পথে রামপুরা থেকে মহানগর প্রজেক্ট হয়ে গুলশান শুটিং ক্লাব পর্যন্ত দুটি বাস চলে। ভাড়া ১০ টাকা।
বাসে চড়ার সুযোগ না পেয়ে যাত্রীরা আগের মতো রামপুরা সড়ক থেকে অবৈধভাবে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করছেন। দেখা যায়, কারওয়ান বাজারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনের সামনে থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
হাতিরঝিলে বাসসেবা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এইচ আর ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সকালে আর বিকেলের দিকে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকলেও অন্য সময় যাত্রীর চাপ বেশি থাকে না। ঈদের পরে রামপুরা-এফডিসি পথে আরও দুটি বাস নামানো হবে বলে তিনি জানান।