সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেলাতে পারেনি সিআইডি

তনু হত্যাকাণ্ড
তনু হত্যাকাণ্ড

কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএ এখনো মেলাতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। অথচ ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এক মাস আগে সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষায় তার আলামত পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, তারা এই ঘটনায় কয়েকজনকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছে। আবার তনুর মা-ও এর আগে দুজন সন্দেহভাজনের নাম সিআইডিকে বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গেই ডিএনএ নমুনা মেলানো হয়নি।
এর কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে নিশ্চিত হয়ে ডিএনএ মেলানোর জন্য। যদি নিশ্চিতই হতাম, এই হত্যায় কে বা কারা জড়িত, তাহলে তো তাদের ধরেই ফেলতাম।’
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু খুন হন গত ২০ মার্চ। ওই দিন রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
তনু খুন হওয়ার পর প্রায় তিন মাস পার হয়েছে। তদন্তে কোনো অগ্রগতি আছে কি না, জানতে চাইলে নাজমুল করিম খান বলেন, ‘আমরা ঝাপসা হলেও কিছু তথ্য পেয়েছি। সেগুলো মাথায় নিয়ে কাজ করছি। কয়েকজনকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছি। আশা করছি, এই হত্যা মামলার সুরাহা করতে পারব।’
তবে দুই দফা ময়নাতদন্ত করেও হত্যার কারণ নির্ণয় করতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা ব্যর্থ হওয়ায় মামলার তদন্তকারীরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন বলা হচ্ছে, ১০ দিন পর কবর থেকে তোলা লাশ বিকৃত হয়ে গেছে, মৃত্যুর কারণ তাই নির্ণয় করা যায়নি। কিন্তু প্রথম দফা ময়নাতদন্তের সময় তো লাশ তাজা ছিল, তখন কেন কারণ নির্ণয় করতে পারলেন না। তখন তো ধর্ষণ বা যৌন সংসর্গের আলামত পেলেন না, যা এখন দ্বিতীয় দফায় বলা হচ্ছে।
কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে ২০ মার্চ রাতে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত হলেও তাতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। তনুর শরীরের জখমের কথা গোপন করায় ওই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। তখন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তনুর শরীর থেকে কিছু নমুনা নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রাপ্ত তথ্য ও পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তে এ-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন চেয়েছেন তাঁরা।
এরপর গত মাসের শুরুতে ডিএনএ প্রতিবেদন পায় সিআইডি, যা তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করে। গত ১৬ মে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় পৃথক তিন ব্যক্তির বীর্যের আলামত পাওয়া গেছে। ওই তিন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে, যাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএর সঙ্গে যাচাই করা যায়।
এর আগে ১০ মে তনুর মা আনোয়ারা বেগম কুমিল্লায় প্রথমে সাংবাদিকদের, তারপর সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেন, সেনানিবাসের ভেতরে তনুকে হত্যা করা হয়েছে। সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ তনুকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর আর তনু ফিরে আসেননি। ওই দুই সেনাসদস্য এ হত্যায় জড়িত বলে তিনি মনে করেন।
তনুর মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থল একটা স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকায়। সেখান থেকে চাইলেই কোনো সন্দেহভাজনকে আটক করা যায় না। রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য কোনো ধরনের ‘সোর্স’ বা চর ব্যবহারের সুযোগ নেই। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তদন্ত করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। কারা কোন সমস্যায় আছেন, সেটা আমার বিষয় না।’ তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার কোনো বাহিনীর ওপর আমি চাপাতে চাই না। আমরা চাই দোষী ব্যক্তিগুলোকে ধরে বিচারের আওতায় নেওয়া হোক।’