পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বার্ষিকীর উদ্যাপন আনন্দের হওয়ার কথা ছিল। কেননা দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর শান্তির প্রত্যাশাতেই চুক্তিটি হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির মূল ধারাগুলো আজও বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১৬ বছর আগে পাহাড়িদের মনে উঁকি দেওয়া আশা আজ দুরাশায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি মানুষ ফিরে পায়নি নিজ ভূমি, হয়নি ক্ষমতায়ন।
এই হতাশার মধ্যেও চুক্তি সম্পাদনকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) আস্থা হারায়নি। গতকাল সোমবার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে জেএসএস আয়োজিত আলোচনা সভায় চুক্তি বাস্তবায়নে দলটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করল।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ভবনের এএস মাহমুদ সেমিনার হলে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৭ সালে চুক্তির পর সাড়ে তিন বছর এবং পরে গত পাঁচ বছরে চুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামী লীগ সরকার এর বাস্তবায়নের সময় পেয়েছিল। কিন্তু এই সময়ে পাহাড়ি জনগণের সঙ্গে প্রতারণাই করা হয়েছে বলে মনে করেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি এই চুক্তিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শ্রেষ্ঠ কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়েছে, বর্তমান সরকারের বারবার করা এই দাবির সমালোচনা করেন আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘এটা হলো বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রিত অতিথিদের কেবল সালাদ ও চাটনি খাইয়ে বিরিয়ানি বা রোস্ট না দিয়েই বিদায় করার মতো। এভাবে দাওয়াতকারী দাবি করতে পারেন যে তিনি খাইয়েছেন, খালি মুখে বিদায় করেননি। এটা তো অন্যায়।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে একটি গণতান্ত্রিক পদক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেন আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি জেএসএসের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা। এটি বাস্তবায়ন না করে শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শক্তিপদ বলেন, গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মাধ্যমেই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, পার্বত্য চুক্তিটি ছিল একটি রাজনৈতিক বিষয়। রাজনীতি ব্যর্থ হলে সহিংসতা ফিরতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়নের দায় তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিতেই হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র পাহাড়ি নাগরিকদের অপমান করেছে।
বিনতাময় ধামাইয়ের সঞ্চালনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেএসএস নেতা দীপায়ন খীসা। আরও বক্তব্য দেন তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।