এভাবে চলতে পারে না: আদালত

আট বছর আগে খুন হন রাজধানীর মেহেরুন্নেসা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষিকা মাহবুবা বেগম। খুনের দুই বছর পর বিচার শুরু করেন আদালত। বিচার শুরুর ছয় বছর পার হলেও ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র সাতজন। বাকি ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
বছরের পর বছর সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে চলেছেন আদালত। তারপরও সাক্ষী হাজির না করায় আদালত নিজেই ক্ষুব্ধ। আদালত বলেছেন, ‘বারবার সাক্ষীদের প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে আন্তরিক নয়। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়া মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর পুরোনো হত্যা মামলা। এভাবে চলতে পারে না।’ দুই বছর আগে আদালতের এমন আদেশের কপি পাঠানো হয় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবর। তারপরও সাক্ষী হাজির করা হয়নি।
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কলেজশিক্ষিকা মাহবুবা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নিহত শিক্ষিকার গাড়িচালক মোতালেব ওরফে আসলাম পাঠানকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালত আসামি মোতালেবের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেন।
জানতে চাইলে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রফিকউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে আসছেন না। সাক্ষীর অভাবে বিচার থমকে আছে। রাষ্ট্রপক্ষের এই সরকারি কৌঁসুলির অভিযোগ, সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। সাক্ষী হাজিরের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুর রহমান বলেন, সম্প্রতি আদালত কলেজশিক্ষিকা মাহবুবা বেগম হত্যা মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তার কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। শিগগিরই ওইসব সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হবে।
মামলার নথিপত্র ও নিহত প্রধান শিক্ষিকার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মাহবুবা বেগম খিলগাঁওয়ে নিজের বাসায় একা একা বসবাস করতেন। তাঁর দুই ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তাঁর গাড়িচালক ছিলেন মোতালেব। তিনিও ওই বাড়ির একটি কক্ষে থাকতেন। ঘটনার দিন মাহবুবার নিজস্ব গাড়ি সংসদ ভবন এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে। এ ঘটনা জানতে পেরে তিনি গাড়িচালক মোতালেবকে বকাঝকা করেন। তাঁকে চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দেন। এতে চরম ক্ষিপ্ত হন গাড়িচালক মোতালেব। এ ঘটনায় মাহবুবাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। আর ওই দিন রাতেই মাহবুবা খুন হন। এ ঘটনায় মাহবুবার ছোট ভাই শেখ আবদুর রহিম বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার বাদী শেখ আবদুর রহিম বলেন, ‘আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছি। আদালতকে বলেছি, গাড়িচালক মোতালেব আমার বোনকে খুন করেছে। তার বাসার মালামাল লুট করেছে। কিন্তু অন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজির করছে না পুলিশ।’ মাহবুবার বোন আইয়ুন নাহার খিলগাঁওয়ে নিজের বাসায় কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের হত্যার বিচার চাই। যে মোতালেব আমার বোনকে নৃশংসভাবে খুন করেছে, তার ফাঁসি চাই।’ কলেজশিক্ষিকা মাহবুবা খুনের সাত দিন পর গ্রেপ্তার হন আসামি মোতালেব। কিন্তু ওই বছরের ২০ মে জামিন নিয়ে তিনি পলাতক হন। আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।