স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো, স্বস্তিতে ছয় গ্রামের বাসিন্দারা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজামখা গ্রামে তাম্বুলপুর বিলের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে ৩০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের এই সাঁকো নির্মাণ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ। গত শুক্রবার সাঁকোটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজামখা গ্রামে তাম্বুলপুর বিলের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে ৩০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের এই সাঁকো নির্মাণ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ। গত শুক্রবার সাঁকোটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজাম খাঁ গ্রামের তাম্বুলপুর বিলের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন স্থানীয় লোকজন। গত শুক্রবার দুপুরে সাঁকোটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের যোগাযোগ সহজ হলো। ফলে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমে গেছে। তাঁদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এত দিন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় করে তাম্বুলপুর বিল পারাপার হচ্ছিলেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের সীমানায় অবস্থিত তাম্বুলপুর বিল। গ্রামগুলো হচ্ছে নিজাম খাঁ, ঘগোয়া ও খোর্দ্দা। এই বিলে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। কিন্তু বিল পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ওই সব গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। গ্রাম তিনটির প্রায় ১০ হাজার মানুষ কখনো নৌকায়, কখনো ভেলায়, কখনো সাঁতরে বিলটি পারাপার হতেন।
সাঁকোটি নির্মিত হওয়ায় নিজাম খাঁ, ঘগোয়া ও খোর্দ্দা গ্রাম ছাড়াও একই ইউনিয়নের লাটশালা, তাম্বুলপুর ও তারাপুরচর গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যোগাযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেল। বিশেষ করে খোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রাম দুটি চরাঞ্চলে অবস্থিত। বিলটি পারাপার ছাড়া এই দুই গ্রামের লোকজনের উপজেলা সদরে যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। এই দুই গ্রামে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তাই সম্প্রতি নিজাম খাঁ, ঘগোয়া ও খোর্দ্দা গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কেউ বাঁশ, কেউ টাকা, কেউ শ্রম দিয়ে সহায়তা দেন। এতে দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এক মাস স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়। গত শুক্রবার দুপুরে সাঁকোটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
খোর্দ্দা গ্রামে অবস্থিত নামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজনু মিয়া বলেন, শিশু ছেলেমেয়েরা বিল পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারত না। অধিকাংশ শিক্ষক দূর থেকে এসব বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু বিলের কারণে তাঁরা নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারতেন না। সাঁকোটি নির্মিত হওয়ায় সুবিধা হয়েছে।
খোর্দ্দা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। বর্ষার সময় জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে পারাপার হতে হতো। শুকনো মৌসুমেও কলার ভেলায় পারাপার হতে হতো। তাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়।’ একই গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, পারাপারের জন্য এখন আর পাড়ে বসে অপেক্ষা করতে হবে না। নৌকায় পারাপার হতে টাকা লাগবে না।
লাটশালা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুস ছালাম বলেন, আগে ব্যবসায়িক মালপত্র পরিবহনে খরচ বেশি লাগত। এখন লাগবে না। এখন কম দামে মালামাল বেচতে পারব।
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসীর ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাঁদের উৎসাহ দিয়েছি।’