লোডশেডিংয়ে লোকসানে তাঁতশিল্প

বিদ্যুৎ​ না থাকায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবতে তাঁত কারখানায় উৎ​পাদন বন্ধ। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l হাসান রাজা
বিদ্যুৎ​ না থাকায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবতে তাঁত কারখানায় উৎ​পাদন বন্ধ। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l হাসান রাজা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলায় লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁত কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে কারখানার মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার মারিয়া টেক্সটাইল মিলের মালিক ইলিয়াছ মোল্লা বলেন, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে বিদ্যুচ্চালিত সহস্রাধিক তাঁত কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিদিন গড়ে শত কোটি টাকার কাপড় উৎপাদিত হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে রমজানের শুরু থেকেই কারখানার মালিকদের জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে কাপড় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের কলাগাছিয়া গ্রামের টেক্সটাইল মিলের মালিক জাকির হোসেন বলেন, বৈদ্যুতিক তাঁত কারখানায় (পাওয়ার লুম) তৈরি থ্রি-পিসে ভালোই লাভ হচ্ছিল। রমজান মাসে বিক্রি ও আয় বেশ ভালো হয়। সারা বছর লাভ না হলেও এ সময়টির জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসা আঁকড়ে ধরে রাখেন। কিন্তু এবার রমজানের শুরু থেকেই তীব্র লোডশেডিং। এর ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই তিনি এ ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।
আড়াইহাজারের শিঙ্গারপুর গ্রামের টেক্সটাইল মিলের মালিক আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাঁত চালিয়ে তাঁর বেশ উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুচ্চালিত তাঁত কারখানা চালু হওয়ার পর থেকে এ ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। তাই তিনি এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
বেশ কয়েকজন তাঁতি বলেন, লোডশেডিংসহ নানা সমস্যার কারণে তাঁরা এ ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। সরকারিভাবে তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে না। ফলে হস্তচালিত তাঁতগুলোও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলার বস্ত্রশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি উদ্যোগ, আর্থিক সহযোগিতা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রয়োজন। তা ছাড়া লোডশেডিং দিনে একবার কিংবা দুবার হতে পারে। এর বেশি হলে সমস্যা।
বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ভোগান্তিও বেড়েছে। রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ গ্রামের গৃহিণী রুবিনা আক্তার বলেন, প্রথম রোজা থেকে বিদ্যুৎ সমস্যা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ভাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ইফতার, সাহরি ও তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হচ্ছে। গভীর রাতেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং চলছে।
নারায়ণগঞ্জ-২ (রূপগঞ্জ) সাওঘাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় ইদানীং লোডশেডিং বেড়েছে। তবে এটা সাময়িক। খুব শিগগির লোডশেডিং কমে আসবে।