মিতুর দুই সন্দেহভাজন খুনি 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত

পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম
পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম

পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার সন্দেহভাজন দুই আসামি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো. রাশেদ (২৮) ও নূর নবী (২৮)।
আজ মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীরহাটের ঠান্ডাছড়ি এলাকায় একটি ইটভাটার পাশে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এ দুজন নিহত হন।
বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের তিন সদস্যও আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সেকান্দর ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজহার। অন্যজনের নাম পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের বাবা আহাম্মদ হোসেন দাবি করেন, গত ২৩ জুন তাঁর ছেলেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মিলিটারি পুল এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর সঙ্গে নবীও ছিলেন। তারপর থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি পুলিশ অস্বীকার করে আসছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মাহমুদা হত্যা মামলার পলাতক আসামিরা রাঙ্গুনিয়ার ঠান্ডাছড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় পলাতক আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর আসামিদের নিজেদের ছোড়া গুলিতে রাশেদ ও নবী নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
আজ দুপুরে রাশেদের বোন রহিমা আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে গত ২৩ জুন বোয়ালখালীর এক আত্মীয়র বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। ভাইয়ের সঙ্গে নবীও ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও ভাইয়ের সন্ধান না পাওয়ায় গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছি। বন্ধুকযুদ্ধ নয়, আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, রাঙ্গুনিয়ার ঠান্ডাছড়ি এলাকায় মাহমুদা হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধ হয়। এতে আসামিদের নিজেদের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, রাশেদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ চারটি মামলা রয়েছে। নবীর বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার আনোয়ার ও ওয়াসিম জবানবন্দিতে বলেছেন, মাহমুদা হত্যার পুরো বিষয়টির সমন্বয় করেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন মুছা, নবী, ওয়াসিম, কালু, রাশেদ, শাহজাহান, আনোয়ারসহ সাত-আটজন।
এ দিকে মাহমুদা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মুছাকে পুলিশের দুই কর্মকর্তা ২২ জুন সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের বন্দর এলাকার একটি বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী পান্না আক্তার। গত সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন তিনি। তিনি দুই কর্মকর্তার নামও বলেছেন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখার পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন। তবে তাঁরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ বলছে, মাহমুদা হত্যার পরিকল্পনাকারী মুছা এখনো পলাতক।
এ দিকে বিভিন্ন টেলিভিশনে মাহমুদা হত্যা মামলার দুই আসামির বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সংবাদ প্রচার হওয়ার পর মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার আজ প্রথম আলোর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার স্বামী কোথায়? আমার স্বামীকে কি মেরে ফেলেছে? তাঁকে পাব কোথায়? আমরা তাঁকে জীবিত ফেরত চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। তাঁদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক রয়েছেন মুছা ও কালু।