আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২১

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে পুলিশসহ অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার উপজেলা সদরে এক পক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে খাসেরহাট ও সৌদিয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় খাসেরহাটে কমপক্ষে ২৬টি দোকানে ভাঙচুর হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হাতিয়া আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হাতিয়ার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর (বর্তমান সাংসদ আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী) অনুসারী আর তিনটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহর অনুসারী প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
দলীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে মোহাম্মদ আলীর অনুসারী চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ পক্ষত্যাগ করে ওয়ালী উল্লাহর পক্ষে যোগ দেন। আলাউদ্দিন আজাদের পক্ষত্যাগ উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ দলের সভাপতির বাড়ির সামনে ওছখালি এলাকায় আজ এক সমাবেশের আয়োজন করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে চলমান বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে ওছখালির দিকে যাওয়ার পথে কয়েকজন কর্মী খাসেরহাটে অবস্থানকারী মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বাজারের ২৬টি দোকান ভাঙচুর ও তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা একটার দিকে ওয়ালী উল্লাহর অনুসারী সোনাদিয়ার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম দলবল নিয়ে ওছখালির দিকে আসার পথে সৌদিয়া বাজার ও এমপির পোল এলাকায় মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। উভয় পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দও শোনা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের ২৫টি গুলি ছোড়ে।
আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সূত্র জানায়, দফায় দফায় সংঘর্ষে আশরাফ উদ্দিন (৪০) নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ আশরাফকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে থানার ওসিসহ আহত হন পুলিশের ছয়জন সদস্য। তাঁদের একই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন দাবি করেন, ওছখালি এলাকায় তাঁরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলীর লোকেরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ অভিমুখী লোকজনকে বাধা দেয় এবং হামলা চালায়। এরপরও দুপুরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়।
অপর দিকে মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, ওয়ালী উল্লাহ ও তাঁর ভাতিজা মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তাঁদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হাতিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে কোনো প্রচারণা হাতিয়ায় করা হয়নি। সমাবেশের নামে তাঁরা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে উপজেলা সদরে ও আশপাশের এলাকায় মহড়া দিয়ে জনমনে ভীতির সৃষ্টির পাশাপাশি নিরীহ লোকজন ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আরিচুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পূর্ববিরোধের জের ধরে এক পক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ হামলা-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশও হামলার শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান থেকে ২৫টি গুলি ছোড়ে। নতুন করে সংঘাত এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।