ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান বাংলাদেশকে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এই অনুরোধ করেন।
শিলংয়ে ‘নদী উৎসব’ শেষে দুই দিনের জন্য শাহরিয়ার দিল্লি আসেন ‘বিমসটেক’ বৈঠকে যোগ দিতে। গত বৃহস্পতিবার তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর ও বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে দেখা করেন। টেলিফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে, সন্ত্রাসের সার্থক মোকাবিলাও তত সহজ হবে। সম্পর্কের এই স্বাভাবিকীকরণে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর দিকে দুই দেশ বেশি নজর দিয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এই লক্ষ্যে ভারতের ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। রাম মাধবের প্রস্তাব, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে বাংলাদেশ আরও নজর দিক। সেখানে আরও লগ্নি বাড়াক। শাহরিয়ার বলেন, সেই কাজে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। ত্রিপুরায় সহকারী হাইকমিশন খোলা হয়েছে, গুয়াহাটিতেও ডেপুটি হাইকমিশন খোলা হবে। ঢাকা-গুয়াহাটি সরাসরি বিমান পরিষেবার কথাও ভাবছে বাংলাদেশ। অক্টোবর মাসে মিজোরামে ট্র্যাক টু আলোচনার প্রস্তাব বিবেচিত হচ্ছে।
শাহরিয়ার জানান, ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর তাঁকে বলেছেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও বেশি করে সাংবাদিকদের আদান-প্রদানের কথা যেন ভাবা হয়। এতে ভরসা ও আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনই দূর হবে অনেক ভ্রান্ত ধারণা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে ভিসা একটা বড় অন্তরায় ছিল। এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার বলেন, ইদানীং এই সমস্যার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ভারত এ বিষয়ে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। ভিসা পেতে টাকাপয়সা লেনদেনের অভিযোগ অনেক দিনের। তা রুখতে বাংলাদেশ সরকারকে কড়া হতে বলেছে ভারত। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে। ভারতও অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভিসা পাঁচ বছরের করা হচ্ছে। মেডিকেল ভিসা দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। ই-ভিসার কথাও ভাবা হচ্ছে। ভিসা নিয়ে অভিযোগ দূর হতে খুব বেশি দেরি হয়তো আর হবে না।
গুলশানের হামলা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর থেকে চরিত্রগতভাবে আলাদা। কারণ, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা। শাহরিয়ার বলেন, সে জন্য এর মোকাবিলাও কঠিনতর। তাঁর কথায়, ‘গুলশানকাণ্ড যে সময় ঘটছে, সেই সময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উন্নয়ন ও নবজাগরণের ক্ষেত্রে দেশ এখন অপ্রতিরোধ্য। এই সময়ে এ ধরনের হামলার উদ্দেশ্য, এই অগ্রগতিকে ব্যাহত করে দেশকে আরও একবার অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড় করানো। আমরা তা কিছুতেই হতে দেব না।’
শাহরিয়ার বলেন, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে দিল্লিতে যে বৈঠক হতে চলেছে, সন্ত্রাসের সার্থক মোকাবিলাই তার প্রধান আলোচ্য বিষয়। সেই বৈঠকে সন্ত্রাসের মোকাবিলায় দুই দেশ কোনো যৌথ পদক্ষেপের কথাও ভাবতে পারে—এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনিক স্তরে তো বটেই, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবেও বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সন্ত্রাস বাংলাদেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারবে না।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভারত যেভাবে সাহায্যের হাত নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা অভিভূত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই লড়াইয়ে সমগ্র ভারত আমাদের পাশে আছে। আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ আরও অনেক দেশের সাহায্যপ্রার্থী। তথ্যের আদান-প্রদানসহ নানা সহযোগিতার ভিত্তিতে সরকার এর মোকাবিলা করছে।’