বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা

গাছের ডালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা। গত ২০ জুন হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য থেকে তোলা ছবি l লেখক
গাছের ডালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা। গত ২০ জুন হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য থেকে তোলা ছবি l লেখক

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের সাড়ে তিন ঘণ্টার ট্রেইলের টিলাময় ঘন জঙ্গলে এসে পৌঁছেছি। বড় বড় পাতার সুউচ্চ গাছ, গিলা লতা, পানির আধার, আলো-আঁধারিতে ঘেরা এক চিলতে বন। হঠাৎ কী যেন একটা উড়ে এসে পাশের গাছে বসল! জলপাই-সবুজ একটা পাখিকে দেখলাম, মূর্তির মতো বসে আছে। একটুও নড়ছে না। মাথায় সুন্দর হলুদ ঝুঁটি। মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে আছি আর থেমে থেমে ক্লিক করছি। কিন্তু ও অবিচল। বসে আছে। একটু একটু করে এগোচ্ছি। সঙ্গীরাও এগোচ্ছে। তারপরও ও স্থির, অবিচল হয়ে আছে। ভাবলাম, বোধ হয় অসুস্থ। কিন্তু খানিক পর একটু নড়েচড়ে বসে আমাদের জানান দিল যে ও সুস্থই আছে। আরও মিনিট পাঁচেক পর সে উড়াল দিল। গত ২০ জুনের ঘটনা এটি। এর আগে মৌলভীবাজারের আদমপুর বিট ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ওকে দেখেছি।
হলদে ঝুঁটির সুন্দর এই পাখির নাম বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা (Greater Yellow-nape, Greater Yellow-naped Woodpecker or Large Yellow-naped Woodpecker)। বড় হলদেসিঁথি কাঠকুড়ালি নামেও পরিচিত। Picidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Picus flavinucha। যার অর্থ সোনালিঘাড় কাঠঠোকরা।
বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা দৈর্ঘ্যে ৩৩-৩৪ সেন্টিমিটার এবং ওজনে ১৫৩-১৯৮ গ্রাম। পুরুষগুলো কিছুটা বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ে সুদৃশ্য সোনালি-হলুদ ঝুঁটি, ঘাড় বাদামি, পিঠ হলদে-সবুজ ও দেহের নিচটা জলপাই-ধূসর। ডানার মধ্য-পালকে চওড়া লাল ও কালো ডোরা এবং লেজ কালো। ঠোঁটের গোড়া কালচে ও আগা সাদা। চোখ বাদামি-রক্তাভ। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-সবুজ এবং নখ ফিকে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। স্ত্রীর থুতনি ও গলার পালক লালচে-বাদামি, পুরুষের ক্ষেত্রে যা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কগুলোর ঘাড় সাদা বা পীতাভ এবং গলায় সাদা-কালো দাগ দেখা যায়। তা ছাড়া এদের দেহের নিচটা ধূসর হয়।
বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশেও পাওয়া যায়। এরা মূলত বড় পাতাওয়ালা চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন এবং গরান বনের বাসিন্দা। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চল এবং চা–বাগান ও সুন্দরবনে এদের দেখা যায়। চোখা ঠোঁটের মাধ্যমে গাছের বাকল থেকে পিঁপড়া, উইপোকা, রসাল শূককীট ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খুঁটিয়ে বের করে খায়। ফুল ও ফলের নির্যাস পান করতেও পছন্দ করে।
মার্চ থেকে মে প্রজননকাল। বনের বড় বড় গাছের কাণ্ডে বা ওপরমুখী শাখায় গর্ত করে বাসা বানায় এবং তাতে তিন–চারটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পালাক্রমে ডিমে তা দেয় এবং ১১-১৪ দিনে ডিম ফোটে। ১৮-৩০ দিনে বাচ্চারা উড়তে শেখে।