পার্কে তালা, বিনোদনবঞ্চিত শিশুরা

২০১১ সালে সংস্কারের কথা বলে পটিয়া শিশু পার্কের ফটকে তালা লাগিয়ে ​দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্কারের পর পার্কটি আর আগের মতো চালু হয়নি। বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। এতে নষ্ট হচ্ছে পার্কের খেলাধুলার সরঞ্জাম। খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। ছবিটি ২১ জুলাই বেলা একটার দিকে তোলা l প্রথম আলো
২০১১ সালে সংস্কারের কথা বলে পটিয়া শিশু পার্কের ফটকে তালা লাগিয়ে ​দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্কারের পর পার্কটি আর আগের মতো চালু হয়নি। বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। এতে নষ্ট হচ্ছে পার্কের খেলাধুলার সরঞ্জাম। খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। ছবিটি ২১ জুলাই বেলা একটার দিকে তোলা l প্রথম আলো

পটিয়ার একমাত্র শিশু পার্ক সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সারা বছরই তালা ঝুলতে দেখা যায় পার্কের ফটকে
আবদুর রাজ্জাক, পটিয়া
ফটকে ঝুলছে তালা। ফটক ও টিকিটঘরের সামনের রাস্তাজুড়ে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি শিশু পার্ক। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার একমাত্র শিশু পার্কটি এভাবে বন্ধই পড়ে থাকে। ফলে খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া থানার পাশে ৭০ শতক জায়গাজুড়ে ১৯৮২ সালে পার্কটি গড়ে তোলা হয়। একসময় পার্কটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকত। তবে ২০১১ সালে সংস্কারের কথা বলে এর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সংস্কার শেষ হলেও আগের মতো পার্কের ফটক অবারিত করে দেওয়া হয়নি সবার জন্য। এলাকার লোকজন জানে না কখন এটি খোলা ও বন্ধ করা হয়।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন পটিয়া মহাকুমা প্রশাসক নাজমুল আলম সিদ্দিকী ডাকবাংলো চত্বরে এই শিশু পার্কটির উদ্বোধন করেন। গত ২০১০-১১ অর্থবছরে পার্কের চারদিকে প্রাচীর সংস্কার, টিকিটঘর নির্মাণ ও খেলাধুলার সরঞ্জাম সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সে সময় ঠিকাদার কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যান। পরে আবার ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু এরপরও নিয়মিত পার্কটি খোলা হয় না।
২১ জুলাই বেলা একটায় পার্কে গিয়ে ফটকে তালা দেখা যায়। এ সময় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এসে ফটকের তালা খুলে দেন। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, সংস্কারের পরও পার্কের বিনোদন সুবিধা বাড়েনি। দুটি বড় ছাতা, আটটি দোলনা, আটটি স্লাইড ও কয়েকটি ওঠানামার সিঁড়ি ছাড়া তেমন কোনো রাইড নেই। বড় ঘাসে ঢেকে গেছে পার্কের আঙিনা। ফটকের পাশে টিকিটঘর থাকলেও এটি কখনো ব্যবহৃত হয়নি বলে জানান পার্কের তত্ত্বাবধায়ক।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘শিশু পার্কে তরুণ-যুবকেরা পার্কের ক্ষতি করে। খারাপ ছেলেমেয়েরাও পার্কে এসে পরিবেশ নষ্ট করে। এ জন্য প্রশাসনের নির্দেশে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্ক খোলা রাখি।’

পটিয়া শিশু পার্কের বন্ধ ফটক l প্রথম আলো
পটিয়া শিশু পার্কের বন্ধ ফটক l প্রথম আলো

তবে তত্ত্বাবধায়কের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি বাস্তবতার। ওই দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে পার্কে গিয়ে তালা বন্ধ দেখা যায়।
পার্কের আশপাশের দোকানিরা জানান, শিশু পার্কের ফটকে প্রায় সময় তালা বন্ধ থাকে। তবে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফটক টপকে ভেতরে গিয়ে খেলাধুলা করে।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই শিশু পার্কটির অবস্থান। বিদ্যালয়ের ছুটির পর আমরা খেলার জায়গা পাই না। বাধ্য হয়ে ফটক টপকে অনেকে ভেতরে ঢুকে খেলাধুলা করে।’
পার্কের পেছনের একটি বাড়িতে থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র অহিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দু-একবার পার্কের ফটক খোলা দেখে ভেতরে ঢুকেছি। তত্ত্বাবধায়ক আমাদের আবার বের করে দিয়েছেন। কেউ না যাওয়ায় পার্কের আঙিনায় বড় বড় ঘাস গজিয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিশু পার্কটি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম। শিশু পার্ক তো শিশুদের বিনোদনের জন্য। সেটি কেন বন্ধ থাকবে?
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রশাসন পার্কের যে সময়সূচি নির্ধারণ করেছেন সেটাই মানতে হবে। তবে তিনটার পর নিয়মিত যেন পার্ক খোলা রাখা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, পার্কে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। তাই ওখানে খেলাধুলার কিছু সরঞ্জাম দেওয়া দরকার।
খেলাঘর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি ওসমান গণি চৌধুরী বলেন, যোগ্য নাগরিক হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে হলে দরকার মুক্ত পরিবেশ। পটিয়ায় শিশু পার্ক বন্ধ থাকায় শিশুরা বিনোদনবঞ্চিত হচ্ছে। পার্কটিতে নতুন খেলার সরঞ্জাম যুক্ত করা উচিত।
মোহসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার বলেন, শিশু পার্ক থেকে দেড় শ থেকে দুই শ গজ দূরে মোহসেনা বিদ্যালয়ের অবস্থান। শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ কমে গেছে। তা ছাড়া সেখানে খেলাধুলার সরঞ্জামও তেমন নেই। নতুন রাইড স্থাপন করে পার্কটি ঢেলে সাজাতে হবে। প্রয়োজনে টিকিটের ব্যবস্থা করা হোক। এতে সরকারও রাজস্ব আয় করতে পারবে, আর শিশুরাও বিনোদন পাবে।