বিদ্যালয়টি ঢেকে আছে পাথর-বালু-যানবাহনে

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চালকিডাঙ্গায় সি টি কে আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রী রেখে দিয়েছে। ছবিটি গত ৩ আগস্ট সকালে তোলা l প্রথম আলো
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চালকিডাঙ্গায় সি টি কে আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রী রেখে দিয়েছে। ছবিটি গত ৩ আগস্ট সকালে তোলা l প্রথম আলো

বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে পাথর ও বালুর স্তূপ। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি যানবাহন। আর এক পাশে বিশাল যন্ত্র। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পুরো বিদ্যালয়টি ঢেকে আছে পাথর-বালু-যানবাহনে।
মাঠের যখন এই অবস্থা তখন বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে চলে পাঠদান। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ভাড়া দেওয়ায় মাঠটি এখন পাথর, বালু, যানবাহন আর যন্ত্রের পুরোপুরি দখলে। বিদ্যালয়টির নাম সি টি কে আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভোজগাতী ইউনিয়নে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজারহাট-চুকনগর সড়কের ২২ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স। সংস্কারের মালামাল মজুত রাখা এবং যন্ত্র স্থাপন করে পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণের জন্য ছয় মাসের চুক্তিতে ঠিকাদারকে ৭০ হাজার টাকায় মাঠটি ভাড়া দেয় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। শ্রমিক ও ঠিকাদারের লোকজন থাকার জন্য বিদ্যালয়ের একটি কক্ষও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি মাঠে যন্ত্রপাতি স্থাপন ও মালামাল মজুত করে কাজ শুরু করে।
সূত্র আরও জানায়, বিদ্যালয়টি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। দুই বছর আগে ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে যায়। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে তা সংস্কার করেন। ওই টাকা কিছুটা হলেও ফেরত পেতে মাঠটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাঠ ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এখনো তা ছাড়েনি। তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
২ আগস্ট সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের গা ঘেঁষে পাথরের স্তূপ। মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের পাথর ও বালুর স্তূপ। মাঠের পূর্ব পাশে বিশাল যন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে পাথরকুচি ও বিটুমিনের মিশ্রণ করা হয়। পাশেই রয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পাথরকুচি ও বিটুমিনের মিশ্রণ পরিবহনের জন্য মাঠের মাঝখান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, যন্ত্র চালু করা হলে বিকট শব্দ ও ধোঁয়া নির্গত হয়। কয়েক দিন আগে প্রথম সাময়িকী পরীক্ষার সময়ও যন্ত্র চালু রাখা হয়। সাত মাস ধরে মাঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না, শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সভাপতি সাহেব নিজের টাকা দিয়ে সব ঠিক করে দিয়েছেন। ওনার কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মাঠটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাঠে যে পরিমাণ যন্ত্র স্থাপন ও মালামাল রাখার কথা তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি রাখা হয়েছে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। লেখাপড়ার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা খুব সমস্যায় আছি। ভাড়া দেওয়াটা ভুল হয়েছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাদিউজ্জামান আজাদ বলেন, ‘মাঠে সামান্য মালামাল রাখার কথা ছিল। ঠিকাদার এত মালামাল রাখবে, এত বড় মেশিন স্থাপন করবে বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলে ভাড়া দিতাম না। আমরা তাদের মাঠ ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছি।’
মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, বৃষ্টির কারণে প্রায় এক মাস সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি না হলে শিগগির কাজ করে মাঠটি ছেড়ে দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে অন্য মাঠে খেলাধুলা করতে পারে সে জন্য কিছু অনুদানও দেওয়া হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন খান বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ ভাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।