বাঁশের সাঁকো দিয়ে আসা-যাওয়া

ভৈরবের ভবানীপুর নিজামত সরকার নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l সুমন মোল্লা
ভৈরবের ভবানীপুর নিজামত সরকার নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l সুমন মোল্লা

কোনো জলাশয় নেই, তারপরও চারপাশে কোমরপানি। পানির মাঝে উঁচু এক টুকরো জমিতে বিদ্যালয়ের ভবন। উপায় না দেখে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর নিজামত সরকার নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এভাবে পড়তে যাচ্ছে। ভবানীপুর গ্রামের এই বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে শুরু হয়। মোট শিক্ষার্থী ২৩০ জন। ভবানীপুর ছাড়াও তেয়ারিচর, সুলায়মানপুর, বাউশমারা, ইমামেরচর, মাধবপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় থেকে মেন্দিপুর সড়ক পর্যন্ত একটি সরু সাঁকো। সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। এটি দুই মাস আগে তৈরি করা হয়। সাঁকোতে হেঁটে যাওয়ার জন্য একটি আর হাতে ধরার জন্য দেওয়া হয়েছে একটি বাঁশ। এরই মধ্যে বাঁশগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। হাতে ধরার দুটি বাঁশ ভাঙা। হাঁটার কয়েকটি বাঁশ দেবে গেছে।
এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা এক হাতে বই আর অন্য হাতে হাতল ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ওই সময় এক শিক্ষার্থী সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে যায়। আর কয়েকজনের হাত থেকে জুতা ও বই পড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলে, আগে বর্ষাকালে তারা নৌকা দিয়ে পারাপার হতো। এখন সাঁকো হলেও তাদের তেমন লাভ হয়নি।
অষ্টম শ্রেণির সাবিনা ও শিমুল বলে, এক সপ্তাহের মধ্যে তারা দুজনই পানিতে পড়ে যায়। তারা উঠতে পারলেও তাদের বইগুলো ভিজে যায়। আর সপ্তম শ্রেণির কাইয়ুম বলে, একবার নয়, দুবার নয়, এক মাসের মধ্যে সে চারবার পানিতে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশে আবাদি জমি। এসব জমি নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি জমে যায়। তখন হেঁটে যাতায়াতের আর কোনো সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে সড়ক থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীরা বেশি পানি জমলে বিদ্যালয়ে আসে না।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রহমত উল্লাহ বলে, পারাপারের সময় বাঁশ নড়ে। সপ্তম শ্রেণির জিয়াসমিন বলে, তার উচ্চতা কম। হাত দিয়ে বাঁশের নাগাল পেতে কষ্ট হয়।
সহকারী শিক্ষক জুয়েল রানা বলেন, শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, কয়েকজন শিক্ষকও ভারসাম্য হারিয়ে হয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন তাঁরা বিব্রত হন।
প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির চারপাশে চারটি সরকারি ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে। ছয়টি বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দেয়। যাতায়াতের সমস্যা দূর করা গেলে আরও অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের বিদ্যালয়ে পড়তে আসবে।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, মাটি ফেলে উঁচু একটি কাঁচা সড়ক করা গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে এক বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ। খবর নিয়ে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।