ঘাঘট নদে বেড়া দিয়ে অবাধে মাছ শিকার

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ঘাঘট নদে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবাধে মাছ শিকার চলছে। এলাকার প্রভাবশালী আটজন এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কৈকুঁড়ি ইউনিয়নের মোংলাকুঠি গ্রামের কুঠিপাড়া ও মাস্টারপাড়ার পাশে নদের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বাঁশের বেড়া। মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে বসানো হয়েছে জাল।
এলাকার কয়েকজন বলেন, দেড় মাস ধরে এভাবে মাছ শিকার চলছে। অন্য কোনো পথে মাছ বেরোতে না পেরে নদের মাঝখানে পেতে রাখা জালে আটকা পড়ছে। এভাবে ছোট-বড় সব মাছ মারা পড়লে ভবিষ্যতে এই নদে মাছ পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া বাঁশের বেড়ার কারণে নদের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদের ওই স্থানের আশপাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে অনেকের আবাদি জমি নদে বিলীন হচ্ছে।
মোংলাকুঠি এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী ও লিয়াকত হোসেন অভিযোগ করেন, আবাদি জমিতে ভাঙন শুরু হলে তাঁরা বেড়া সরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু অনেকবার বলার পরও তা সরিয়ে নেওয়া হয়নি। কারণ, এই মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাবশালী।
১৩ আগস্ট নদের ওই স্থানে গিয়ে মাছ শিকারে জড়িত চারজনকে পাওয়া যায়। তাঁদের একজন মোংলাকুঠি পশ্চিম জামে মসজিদের ইমাম মোকছেদ আলী। তিনি নদে মাছ শিকারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। মোকছেদ বলেন, ‘এলাকার আটজন মিলে লাভের আশায় ৭২ হাজার টাকা খরচ করে বাঁশের খুঁটি ও বেড়া দিয়ে নদী ঘিরে জাল দিয়ে মাছ ধরছি। বিষয়টি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আমরা জানিয়েছি। তাঁদের বাসায় সকাল হলে মাছ পৌঁছে দিতে হয়। এ ছাড়া আশপাশে যাঁদের আবাদি জমি ভাঙছে, তাঁরাও নিত্য মাছ নিতে হাজির হন।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এই মাছ শিকারে জড়িত আরও পাঁচজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন মন্তাজ আলী, লাভলু মিয়া, আফজাল হোসেন, কালিদাস রায় ও সফিউল আলম। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক।
লাভলু মিয়া বলেন, নদের ওই স্থানে তাঁরা ৩২০টি বাঁশের খুঁটি পুঁতেছেন। এরপর খুঁটিগুলোর সঙ্গে ঘন করে বাঁশের শক্ত বেড়া দেওয়া হয়েছে। নদের ঠিক মাঝখানের খানিকটা অংশ ফাঁকা রেখে সেখানে বিশেষ কায়দায় জাল বসানো রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে লাভলু মিয়া বলেন, ‘নদীতে এভাবে মাছ শিকার করা বেআইনি, তা আমরাও জানি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এলাকার সবাই কমবেশি জড়িত।’
জানতে চাইলে পীরগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাঘট নদে এভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি আমি দুই দিন আগে জানতে পেরেছি। প্রবহমান নদে বাঁশের বেড়া ও খুঁটি দিয়ে ঘিরে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেখানে যেতে পারিনি। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’
পীরগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আলিয়া ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’