পদ্মায় পানি বাড়ছে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে। এরই মধ্যে রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় নদী-তীরবর্তী কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাবনার পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে গতকাল তোলা ছবি  l প্রথম আলো
পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে। এরই মধ্যে রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় নদী-তীরবর্তী কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাবনার পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

পদ্মা নদীর পানি কয়েক দিন ধরে বাড়ছে। এতে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর নদীতীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আজ শনিবার বা কাল রোববারের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।

প্রথম আলোনিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গঙ্গা অববাহিকার বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগামী দুই দিনে এগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি বাড়বে। ইতিমধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর ও কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ভারতের বিহার ও আশপাশের এলাকার বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এ পানি নামছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ভেতরে পদ্মা দিয়ে। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী রিপন কর্মকার বলেন, এ সময় ফারাক্কার ফটকগুলো এমনিতে খোলা থাকার কথা। ফলে নতুন করে ফটক খোলা হয়েছে বলে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বন্যার পানি গঙ্গা হয়ে পদ্মা দিয়ে নামার সময় রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ফলে এ এলাকার মানুষের কাছে এই বন্যা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।

পদ্মা নদীর শুকনো অবস্থার ছবিটি ৩ মার্চ তোলা
পদ্মা নদীর শুকনো অবস্থার ছবিটি ৩ মার্চ তোলা


কুষ্টিয়া অফিস
জানায়, পদ্মায় পানি বেড়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৩৫টি ও ভেড়ামারা উপজেলার দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা পাউবোর সূত্র বলেছে, গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় এ নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
দৌলতপুরের চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ বলেন, এই ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ৪০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব মানুষ। ধান, মরিচ ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, মাত্র দুই দিনের পানি বৃদ্ধিতে এ ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পদ্মার শাখা গড়াই নদের পানিও বাড়ছে। এতে কুষ্টিয়া শহর-সংলগ্ন নদতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে গতিতে পানি বাড়ছে, তাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। ভারতের বিহারে ভারী বৃষ্টি হতে থাকায় ভারত ফারাক্কা বাঁধের কপাট খুলে দিয়েছে।’ পাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা ও গড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা পাউবোর সূত্র বলেছে, গত ৩১ মার্চ রাজশাহীতে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৬ মিটার। স্বাধীনতার পর ৪৫ বছরে এটাই ছিল রাজশাহীতে পদ্মায় সর্বনিম্ন পানি প্রবাহের রেকর্ড। তবে ১ জুন থেকে পানির উচ্চতা সামান্য করে বাড়ছে। আর গত কয়েক দিনে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে এবার বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

রাজশাহী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম আলী মর্তুজা বলেন, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৩১ মিটার। বেলা তিনটায় ছিল ১৮ দশমিক ৩০ মিটার, সকাল নয়টায় ১৮ দশমিক ২৮ এবং সকাল ছয়টায় ১৮ দশমিক ২৬ মিটার। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন পানি বাড়লেও গতকাল সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার শুরুতে (স্টার্টিং পয়েন্ট) পানির উচ্চতা একই আছে।

পানি বেড়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে বাঘা পর্যন্ত পদ্মার উভয় তীরে এবং নদীর চরাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। রাজশাহী নগরের লালন শাহ পার্ক থেকে আলুপট্টি পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের খুব কাছে পানি থইথই করছে। চর খিদিরপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।