কাবা শরিফে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

সৌদি আরবের স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা। জুমার নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্র মসজিদুল হারামের দিকে মুসল্লিদের স্রোত। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই হেঁটে যাচ্ছেন। অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে রওনা হয়েছেন।
পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় সমবেত হওয়া বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান গতকাল কাবা শরিফে জুমার নামাজ আদায় করেন। নানা বর্ণ, গোত্রের মানুষ দাঁড়িয়েছেন এক কাতারে। সুরা ফাতেহা পাঠের পর আমিন ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। নামাজ শেষে জানাজা হয়। একসঙ্গে ১০ জনের জানাজা পড়েছি। লাখ লাখ মুসল্লি শরিক হলেন তাঁদের জানাজায়। এই ১০ জনের কবর হবে পবিত্র মক্কার মাটিতে।
কয়েক বছর ধরে মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাই বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী ছড়ানো। কাবা শরিফ, মাতাফ (তাওয়াফের স্থান), বেজমেন্ট, নিচতলা, একতলা, দোতলা, ছাদ সব গতকাল ছিল কানায় কানায় ভরা। কাবা শরিফের আশপাশের রাস্তাও ছিল মুসল্লিতে পূর্ণ। মিসফালা (কবুতরের মাঠ) এলাকার অনেক বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সেই সব খালি স্থানে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন হাজার হাজার মুসল্লি। নামাজের তিন ঘণ্টা আগেই মসজিদুল হারামের চারপাশের সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
খুতবা শোনার জন্য মসজিদের বাইরেও ছিল পর্যাপ্ত মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা। খুতবায় মক্কা শরিফের মর্যাদা, কাবা শরিফ, হাজরে আসওয়াদ, জমজমের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মসজিদুল হারামের ইমাম শাইখ সউদ সুরাইম নামাজে ইমামতি করেন। বিশ্বের সব মানুষের জন্য দোয়া করা হয়।
নামাজের পর পরিচিত বেশ কয়েকজন হজযাত্রী বললেন, ফজরের নামাজ আদায় করে কাবা শরিফের কাছাকাছি অপেক্ষা করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের অনেকে প্রথম কাতারে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরেছেন।
শুক্রবার এখানে ছুটির দিন। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি জুমার নামাজ আদায়ের পর পবিত্র হজ পালন করতে দেশ থেকে আসা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে নিজ স্থানে ফেরেন।
নামাজ আদায় করে ফেরার পথে কথা হলো ঢাকার সাভারের রাঢ়ীবাজার থেকে আসা মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এত বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেছি। শুকরিয়া জানাই আল্লাহর কাছে।’
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর খন্দকার গলির বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস স্বামীসহ হজ পালন করতে এসেছেন। জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় জামাত। এত বড় জামাতে শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।’
মসজিদুল হারামে প্রবেশের জন্য ছোট-বড় শতাধিক পথে ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। প্রতিটি পথে পুলিশ তল্লাশি করেছে। যাঁদের সঙ্গে ব্যাগ ছিল, সেই ব্যাগ পরীক্ষার পর প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। যাঁদের সঙ্গে বড় ব্যাগ ও ক্যামেরা ছিল, তাঁদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে বাইরে। কারণ, এসব নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। নারীদের ব্যাগ তল্লাশি করেছেন নারী নিরাপত্তাকর্মীরা।