বিশেষ প্রার্থীর জন্য গোপনে পরীক্ষা!

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগে গোপনে পরীক্ষা হয়েছে গতকাল শনিবার। সম্মিলিত দীঘারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে একজনকে নিয়োগ দিতে গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা নেওয়ার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো কারণ না দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে চিঠি দেওয়া হয়। পরে অন্য অনেক প্রার্থীকে না জানিয়ে হুট করে গতকাল পরীক্ষা নেওয়া হয়।
অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, গতকালের গোপন পরীক্ষায় অংশ নেন মূলত তিনজন প্রার্থী। তবে রিপন মিয়াই প্রকৃত প্রার্থী। বাকি দুজন পরীক্ষা দিয়েছেন রিপনকে সহযোগিতা করার জন্য।
আবেদনকারীদের একজন দীঘারপাড়া গ্রামের সামিনুর ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সম্মিলিত দীঘারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নয়জন ওই পদের জন্য আবেদন করেন। একজনের আবেদন বাতিল হলে বাকি আটজনকে নিয়োগ কমিটির সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনাম ফারুক পরীক্ষায় অংশ নিতে চিঠি দেন। চিঠিতে ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিনই সকালে তাঁদের জানানো হয়, বিশেষ কারণে পরীক্ষা হবে না। পরিবর্তিত তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে। গতকাল দুপুরে সামিনুর প্রতিবেশীদের মুখে শুনতে পান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনজন অংশ নিয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও কিছুই জানেন না বলে জানান।
আবেদনকারীরা জানান, গোপনে পরীক্ষা নেওয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ ভাগ আবেদনকারী। আটজন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র তিনজন। মূল প্রার্থী রিপন মিয়া অষ্টম শ্রেণি পাস। আবেদনে যোগ্যতাও ছিল তা। অপর দুজন ছিলেন মূল প্রার্থীর সহযোগী। তাঁদের একজন জাহিদ হোসেন লস্কর হিসাববিজ্ঞানে ও তাপস কুমার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনজনের কম উপস্থিত থাকলে নিয়োগ পরীক্ষার কোরাম পূরণ হবে না—এই কারণে তাঁদের দিয়ে আবেদন করানো হয় এবং গোপন পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া হয়।
ওই দুজনের একজন স্বীকার করেছেন তিনি প্রক্সি দিতে গিয়েছিলেন। তিনি এই চাকরি করবেন না।
প্রধান শিক্ষক এনাম ফারুক দাবি করেন, তিনি সবাইকে মৌখিকভাবে নতুন তারিখ ও সময় জানিয়েছিলেন। উপস্থিতির হার অর্ধেকের কম কেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আবেদনকারীদের বিষয়। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ সরকার বলেন, গোপনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে—এটা ঠিক নয়। ২৫ আগস্ট চিঠি দেওয়া হলেও তাদের সমস্যা থাকায় প্রধান শিক্ষককে তারিখ পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল। সেই পরিবর্তিত তারিখ গতকাল ২৭ আগস্ট তাঁর কার্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের পরিবর্তিত তারিখ ও সময় মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকছেদুল ইসলাম বলেন, এভাবে মুখে মুখে জানিয়ে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক নয়। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।