'আমরা লাশও নিতাম নায়'

‘তাইনরা তো বেশ আগ থাকি বাড়িছাড়া। হুনছি আজকু মারা গেছইন। বাদ পথের (খারাপ পথের) মানুষ, আমরা লাশও নিতাম নায়।’ উঠানে দাঁড়িয়ে ক্ষোভের সঙ্গে এসব কথা বলেই ঘরে চলে যান তিনি। উঠানে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও আর তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানালেন, লাশ নিতে চান না বলেছেন যিনি, তিনি নারায়ণগঞ্জে নিহত তামিম চৌধুরীর চাচাতো ভাই।

শুধু তামিমের বাড়ির লোকজন নন, আশপাশের বাড়িসহ গ্রামের অন্যরাও তামিম বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নন। তামিমের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রাম। এক পাশে সুতারকান্দি স্থলবন্দর। গ্রামের বাকি তিন দিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। বড়গ্রামের মাঝামাঝি তামিমদের বাড়ি। দাদার আমলে নির্মিত পাকা বাড়ি। সামনে বিরাট পুকুর, শানবাঁধানো ঘাট আর বড় উঠান পেরিয়ে মাঝখানের বাড়িটি তামিমদের। তামিমের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সোয়া মিয়া।

বাড়ির লোকজন জানান, শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম শিপইয়ার্ডে চাকরি করতেন। তামিম বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রামে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর পুরো পরিবার চলে যায় কানাডায়। সেই থেকে কানাডা নিবাসী তাঁরা। বাড়ির লোকজন শুনেছেন, তামিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তামিম কোথায় বিয়ে করেছেন, দেশে না বিদেশে; তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা কোথায়, সেটা বাড়ির লোকজন জানেন না। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় তামিমের নানার বাড়ি। তবে ঠিক কোন গ্রামে, সে তথ্য কেউ জানাতে পারেনি।

গ্রামের বাড়িতে তামিমের দুই চাচা পরিবার নিয়ে থাকেন। ছোট চাচা নজরুল ইসলাম চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার মারা যান। গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়ির উঠানে পা রাখতেই তামিমের এক চাচাতো ভাই লাশ গ্রহণ না করার কথা জানিয়ে দ্রুত ঘরের ভেতর চলে যান। এরপর ঘণ্টা খানেক উঠানে দাঁড়িয়েও পরিবারের আর কোনো পুরুষ সদস্যের দেখা মেলেনি। দুই চাচার পরিবারের নারী ও শিশুদের পাওয়া গেছে।

তামিমের এক চাচি, নাম বলেছেন আঙ্গুরা খাতুন চৌধুরী, প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ২৩ বছর হয়। তার আগে তামিমরা চট্টগ্রামে চলে যায়। সেখান থেকে কানাডা। ২১ বছর আগে তামিম একবার দেশে এসেছিল বলে শুনেছি। এখন তার নাম শুনলে ভয় লাগে।’

তামিমের চাচা কয়লা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন না। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কানাডা যাওয়ার পর থেকে তামিমের বাবার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। এখন তামিমকে ভাতিজা বলতে তাঁর ঘৃণা হয়।

গ্রামের মানুষ বলছেন, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতায় নাম আসা ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এলাকার মানুষ প্রথম তামিমকে চিনেছেন। এর আগে তামিমের নাম বা তাঁর পরিবারকে গ্রামের অনেকেই চিনতেন না।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, তামিমের গ্রামের বাড়ির কেউ তাঁর মরদেহ গ্রহণ করবেন না, বিষয়টি গ্রামে গিয়ে পুলিশ জেনেছে। আর মরদেহ গ্রহণের জন্য কানাডা থেকে পরিবারের কেউ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।