হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো...

ঢাকার নবাবগঞ্জের দিঘিরপাড় এলাকার ইছামতী নদীতে দিঘিরপাড় নওমোজাহিদ ক্লাব আয়োজিত নৌকাবাইচের দৃশ্য। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সাজিদ হোসেন
ঢাকার নবাবগঞ্জের দিঘিরপাড় এলাকার ইছামতী নদীতে দিঘিরপাড় নওমোজাহিদ ক্লাব আয়োজিত নৌকাবাইচের দৃশ্য। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সাজিদ হোসেন

নদীর দুই পাড়ে উপচে পড়া দর্শক। ইঞ্জিনচালিত ও পানসি নৌকা নিয়ে নদীতেও মানুষের উপস্থিতি। কোনো কোনো নৌকায় উচ্চ শব্দে বাজছিল গান। দর্শকের টান টান উত্তেজনার মধ্যেই বাইচের নৌকার মাঝিরা হাঁক দিলেন হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো। দর্শকদের হর্ষধ্বনি আর হাততালি বাড়তি উৎসাহ জোগাল নৌকাগুলোকে।
গতকাল শনিবার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বকসনগর ইউনিয়নের দিঘিরপাড় নওমোজাহিদ ক্লাব আয়োজিত নৌকাবাইচের আয়োজন করে। বাইচে স্থানীয় ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মোট আটটি নৌকা অংশ নেয়। বাইচটি বিকেল চারটা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয়।
নবাবগঞ্জের বান্দুরা ইউনিয়নের হাঁড়িরকান্দা মাঝিরকান্দা থেকে আসা বাইচের নৌকা ‘খানবাড়ি’। এটি শেষ পর্যন্ত নিজেকে অপরাজিত রাখে। প্রায় ৬০ জনের মাঝির এ নৌকাটি বিজয়ী হিসেবে জিতে নিয়েছে মোটরসাইকেল। খেলায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে স্থানীয় গোল্লা গোবিন্দপুরের ‘শেখ আবদুল খালেক’ নৌকা। এটি দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে জেতে রেফ্রিজারেটর।
খানবাড়ি নৌকার মালিক আলী খান। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘খানবাড়ি নৌকার ঐতিহ্য আছে। এ নৌকা যেখানেই যায় পুরস্কার জেতে।’
বাইচের তৃতীয় পুরস্কার রঙিন টেলিভিশন। পুরস্কারটি পাওয়ার কথা ছিল ‘পি কে বি ফ্রেন্ডস ক্লাব’ নৌকার। এটি এসেছিল নবাবগঞ্জের শোল্লা ইউনিয়ন থেকে। শেষবেলায় নৌকাটির সঙ্গে আসা সমর্থকেরা বাইচ আয়োজনকারীদের সঙ্গে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। কর্তৃপক্ষ নৌকাটিকে খেলা থেকে বাদ দেয়। ফলে তৃতীয় হয়েও পুরস্কার হারায় নৌকাটি।
দিঘিরপাড় নওমোজাহিদ ক্লাবের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা নৌকাবাইচের আয়োজন করি। এবার একটু ঝামেলা হয়েছিল। ঝামেলা করায় একটি নৌকাকে বাদ দেওয়া হয়।’
নৌকাবাইচে নবাবগঞ্জ উপজেলার ‘দাদা-নাতি’, ‘বাংলার ঐতিহ্য’, ‘মাসুদ খান’ ও ‘সোনার বাংলা’ নৌকা অংশ নেয়। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল থেকে আসা ‘রাঢ়ীখাল এক্সপ্রেস-২’ এসেছিল নবাবগঞ্জের বাইরে থেকে। অংশগ্রহণকারী সব নৌকাকে দেওয়া হয় সান্ত্বনা পুরস্কার।
মো. হালিম খান। বয়স ৬৫ বছর। তিনি বকসনগরের পাশের ইউনিয়ন নয়নশ্রীর বকচর থেকে এসেছেন বাইচ দেখতে। তিনি বলেন, ‘আগে আমগো ইউনিয়নে বাইচ মিলাইতো (বাইচ হতো)। এহন আর হয় না। ছোটকাল থাইকা বাইচ দেখি। হের লাইগা নাতিরে নিয়া চইলা আইছি।’
আরেক দর্শক মো. উমেদ আলী। তিনি এসেছেন শোল্লা ইউনিয়নের কালীগঙ্গা থেকে। তাঁদের নৌকার নাম বাংলার ঐতিহ্য। উমেদ আলী বলেন, ‘আগে নিজেই মাঝি হিসেবে বাইচে নামতাম। এহন বয়স হইছে হের লাইগা আর খেলি না। আইছি নিজেগোর নাওয়ের খেলা দ্যাখতে।’
নৌকাবাইচের প্রধান অতিথি নূরে আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্য নৌকাবাইচ। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা প্রতিবারই বাইচ আয়োজনের চেষ্টা করি। আমরা চাই, মানুষ যেন শেকড় ভুলে না যায়। যদিও খেলায় একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঠিক করা হয়েছে।’