বন রক্ষায় সহযোগীরাও হবেন স্বাবলম্বী

মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যরা পেলেন আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ। খামার গড়ার জন্য তাঁদের হাতে মুরগি তুলে দিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা l প্রথম আলো
মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যরা পেলেন আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ। খামার গড়ার জন্য তাঁদের হাতে মুরগি তুলে দিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা l প্রথম আলো

বনের ওপর আঘাত হানার খবর পেলেই ছুটছেন পাহাড়ে। হোক গভীর রাত কিংবা প্রখর রোদ। ক্ষমতাশালীর চোখরাঙানি, ভয় উপেক্ষা করে দিনরাত বন রক্ষায় কাজ করছেন তাঁরা। কোনো কিছুই তাঁদের দমাতে পারে না। কিন্তু তাঁরা দমে যাচ্ছিলেন দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। তাঁরা একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ বন পাহারা দলের সদস্য (সিপিজি)। এবার সংস্থাটি তাঁদের স্বাবলম্বী করতে এগিয়ে এসেছে। তাঁদের মধ্যে বিলি করেছে বিকল্প জীবিকায়ন প্রকল্পের বিভিন্ন উপকরণ।
৬ সেপ্টেম্বর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেম আ লাইভলিহুড (ক্রেল) প্রকল্পের উদ্যোগে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান কার্যালয়ে যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যদের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ উপলক্ষে এক উন্মুক্ত সভার আয়োজন করা হয়। মেধাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্বগত বক্তব্য দেন ক্রেল প্রকল্পের চকরিয়ার সমন্বয়কারী মো. আবদুল কাইয়ুম। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কেরামত আলী মল্লিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ, ক্রেল প্রকল্পের কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শফিকুর রহমান, ফাঁসিয়াখালী সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এ বি এম জসিম উদ্দিন, ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মোকাম্মেল কবির, মেধাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মীর আহমেদ হেলালী।
সভা শেষে ক্রেল প্রকল্পের পক্ষ থেকে মেধাকচ্ছপিয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ৩১ জন যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যের মধ্যে ৩ হাজার টাকা করে ৯৩ হাজার টাকার মুরগি তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিস্তির ভিত্তিতে তিন লাখ টাকা দামের দুটি ইজিবাইক দেওয়া হয় পাহারা দলের দুজন সদস্যকে।
সভায় ডিএফও মো. কেরামত আলী মল্লিক বলেন, ‘কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের এত সুন্দরভাবে বন রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি কাজ করছেন যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যরা। তাঁরা টাকাপয়সার লোভ–লালসা ঝেড়ে ফেলে পরিবেশ রক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছেন। আমি মনে করি, এরাই পৃথিবীর সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ মানুষ।’
ক্রেল প্রকল্পের চকরিয়ার সমন্বয়কারী আবদুল কাইয়ুম বলেন, যৌথ বন পাহারা দলের সদস্যরা একসময় বনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এরপর তাঁদের নিয়ে গঠন করা হয় যৌথ বন পাহারা দল। এখন বনের ওপর নির্ভরশীল সেই মানুষেরাই বন রক্ষায় কাজ করছেন।
পাশাপাশি বিকল্প জীবিকায়ন সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন পশুপালন, হস্তশিল্প ও লাভজনক কৃষিকাজ করে তাঁরা স্বাবলম্বী হবেন। সেই লক্ষ্যে তাঁদের মধ্যে সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।