টাম্পাকোর নিখোঁজ তালিকার দুই শ্রমিকের লাশ শনাক্ত

গতকাল কারখানা এলাকায় ছেলে রাজেশের ছবি হাতে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা । আজ ছেলের খোঁজ পেলেন ঠিকই। তবে লাশের। ছবি: ফাইল ছবি
গতকাল কারখানা এলাকায় ছেলে রাজেশের ছবি হাতে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা । আজ ছেলের খোঁজ পেলেন ঠিকই। তবে লাশের। ছবি: ফাইল ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণের পর আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ তালিকার ১২ জন শ্রমিকের মধ্যে দুজনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের লাশ আজ সোমবার সকালে কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তায় ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে উদ্ধার হয়। শনাক্ত হওয়া দুজনের একজন হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গীর হিমারদীঘি আমতলী বস্তির হরিজন কলোনির দীলিপ ডোমের ছেলে রাজেশ বাবু (২২)। তিনি কারখানায় ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। অপরজন হলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৪৫)।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতুর পাশে স্থাপিত গাজীপুর জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুমে কর্তব্যরত কর্মকর্তা গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম নিহত দুজনের স্বজনদের বরাত দিয়ে সোমবার বিকেলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ইসমাইলের বড় ভাই নূরুল ইসলাম জানান, আজ সোমবার সকালে ভবনের ছাদের নিচ থেকে তাঁর ভাইয়ের লাশ উদ্ধার হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা মোবাইল ও আইডি কার্ড দেখে তাঁর লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর পকেট থেকে সাত হাজার টাকাও পান তিনি। ঘটনার দিন কারখানা ছুটির পর ওই টাকা বিকাশ করে তাঁর গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর কথা ছিল। গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে।

রাজেশের পরনের জামা-কাপড়, হাতে সোনার আংটি ও মানিব্যাগ দেখে তাঁর মা মিনা রানী ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। সোমবার সকালে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। আট মাস আগে রাজেশের বিয়ে হয়। তাঁর স্ত্রীর গর্ভে ছয় মাসের সন্তান রয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম আরও জানান, তিন দিন ধরে ওই কন্ট্রোল রুমে কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকা করা হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা সেখানে তথ্য দিয়ে যান। সোমবার সকাল পর্যন্ত ১২ জন নিখোঁজ শ্রমিকের নাম লিপিবদ্ধ হয়। তাঁরা হলেন কারখানার সিনিয়র অপারেটর নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫), প্রিন্টিং অপারেটর মাসুম আহমেদ (৩০), ফ্লোর হেলপার মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), সহকারী অপারেটর আজিমুদ্দিন (৩৬), সহকারী অপারেটর জহিরুল ইসলাম (৩৭), পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজেশ বাবু (২২), হেলপার রিয়াদ হোসেন মুরাদ, প্রিন্টিং অপারেটর মো. ইসমাইল হোসেন (৪৫), স্কুটিং অপারেটর আনিছুর রহমান (৩০) ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভীমনগর এলাকার মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা (২২), কারখানার অপারেটর রেদোয়ান আহমদ (৩৭) এবং অপারেটর সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার আলী নগর এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম (৩৫)। তাঁদের মধ্যে দুজনের পরিচয় শনাক্ত হলো।

এদিকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত ২৯ জনের লাশ পাওয়া যায়। এরপর রাত দেড়টার দিকে ওই কারখানা থেকে আরও দুটি এবং কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তায় ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে সকালে আরও দুটি লাশ উদ্ধার হয়।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান জানান, অজ্ঞাত সবগুলো লাশের ডিএনএ টেস্ট করা হবে। এ জন্য তাঁদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অজ্ঞাত ছয় লাশের মধ্যে দুজনের পরিচয় মিলেছে।

মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা

টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত জুয়েল মিয়ার বাবা মো. আবদুল কাদের বাদী হয়ে গতকাল রাতে টঙ্গী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি এবং আরও সাতজনের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।