পারিবারিক কবরস্থানে কাদের মোল্লার লাশ দাফন

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লাকে দাফন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোররাত সোয়া চারটায় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নে তাঁর গ্রামের বাড়ি আমীরাবাদে তাঁকে দাফন করা হয়।

কাদের মোল্লার ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের কবরের পূর্ব পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা এক মিনিটে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এরপর পুলিশ প্রহরায় তাঁর মরদেহ ফরিদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৫টি গাড়ির বহর গতকাল দিবাগত রাত তিনটা ২৫ মিনিটে আমীরাবাদে পৌঁছায়। মৃতদেহটি গ্রহণ করেন কাদের মোল্লার ছোট ভাই ভাসানচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোল্লা মো. মাইনউদ্দিন আহম্মেদ। ওই গাড়ির বহরে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য গাড়িগুলো ছিল পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‌্যাব, বিজেপিসহ নিরাপত্তাকর্মীদের।

এর আগে রাত ১১টার দিকে খুলনা ও বরিশাল থেকে দুই প্ল­াটুন (৪০ জন) আর্মড পুলিশ কাদের মোল্ল­ার বাড়িতে গিয়ে সমগ্র বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর সদরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লোকমান হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে বাড়ির পশ্চিম পাশে অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোঁড়াসহ জানাজা ও দাফনের প্রাক-প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

রাত তিনটা ৪৮ মিনিটে কাদের মোল্লার বাড়ির আঙিনায় জানাজা শুরু হয়। জানাজায় জেলা জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বদরউদ্দিনসহ জেলা জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী, প্রতিবেশীসহ ছয় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। জানাজা পড়ান ফরিদপুর টেপাখোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু তালেব।

রাত চারটা ছয় মিনিটে দাফনের কাজ শুরু হয় এবং অতি দ্রুততার সঙ্গে মাত্র নয় মিনিটের মধ্যে চারটা ১৫ মিনিটে দাফনকাজ শেষ হয়।

এ অনুষ্ঠানে কাদের মোল্লার নিকটাত্মীয়ের মধ্যে তাঁর ভাই মোল্লা মো. মাইনউদ্দিন আহম্মেদ, ভাতিজা সজীব মোল্লা ও ভাগনা মনি মৃধা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা ও দাফনের সময় কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ার জাহান, দুই ছেলে ও চার মেয়ের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

স্ত্রী ও সন্তানদের উপস্থিতির না থাকার কারণ জানাতে গিয়ে কাদের মোল্লার ছোট ভাই প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কাদের মোল্লার ছোট ছেলে মওদুদ আহমেদকে পুলিশ ঢাকার রমনা থানায় নিয়ে দুই ঘণ্টা আটকে রাখে। এ ছাড়া নিরাপত্তার সমস্যার কথা বিবেচনা করে এবং রাতেই সব কার্যক্রম শেষ হওয়ায় তাঁরা কেউ জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে শরিক হতে পারেননি।

নির্বাহী হাকিম মোহাম্মদ মামুন শিবলী বলেন, ধর্মীয় বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনেই কাদের মোল্লার জানাজা ও দাফনের কাজ শেষ করা হয়েছে।

শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি

কাদের মোল্লার শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর জানাজা সকালে সদরপুর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হোক। এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন কাদের মোল্লার ছোট ভাই। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ওপরের নির্দেশে আমরা সব কাজ করেছি, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।’

আজ বিকেল তিনটায় আমীরাবাদ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কাদের মোল্ল­ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।