গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত, নাগরিক অধিকারের অবনতি

বাংলাদেশে ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং বিরোধী ও মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রমে বিধিনিষেধসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্রমেই অবনতি হয়েছে। সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনা বেড়েছে। আবার কিছু শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার এই অভিমত দেওয়া হয়েছে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি: ইইউ অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০১৫’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন গতকাল গৃহীত হয়েছে।
ইইউর ওয়েবসাইটে প্রচারিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের সংস্কার; মৃত্যুদণ্ড বিলোপ; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন; রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা; সংখ্যালঘু, মানবাধিকার, নারী ও শিশু অধিকার কর্মীদের অধিকার; নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন ও শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলা ২০১৫ সালে কয়েক গুণ বেড়েছে। চারজন ‘নাস্তিক’ ব্লগার এবং একজন প্রকাশকের হত্যায় প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উত্থানের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। দুই বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি তুলে ধরেছে। তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ২০১৫ সালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুশাসন, মানবাধিকার ও অভিবাসন-বিষয়ক উপ-গ্রুপ এবং নভেম্বরে যৌথ কমিশনের বৈঠকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব বৈঠকে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিরোধী ও মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর পরিস্থিতি এবং নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংলাপ, জনকূটনীতি, উন্নয়ন সহায়তা ও কর্মসূচি, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে কিংবা মাঠপর্যায়ে ঘুরে ইইউ এবং এর সদস্যদেশগুলো নিয়মিতভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইইউর মিশনপ্রধানেরা রাজনৈতিক সংঘাত এবং এর ফলে হতাহতের বিষয়ে অনুতাপ জানিয়েছেন।
ব্লগারদের হত্যার ব্যাপারে ইইউ জোরালো ভাষায় নিন্দা জানিয়ে কয়েকবার বিবৃতি দিয়েছে এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই প্রস্তাবে অসাম্প্রদায়িক লেখক, ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিদেশি সাহায্যকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা, হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সেন্সরশিপ বন্ধের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে।
পরপর তিনটি নির্বাচন (সর্বশেষ ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন—যাতে ইইউর পর্যবেক্ষকেরা ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন) পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার জন্য ইইউ অন্য দাতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে।