ফাঁকা মাঠে ১২৭

সংসদ
সংসদ

প্রধান বিরোধী দল নেই। মাঠ ফাঁকা। ১২৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। দেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এটি নতুন নজির। এর আগে ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে এভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ৪৮ জন।
বিরোধী দলবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে গতকাল শুক্রবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। রাতে সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা যায়, ৩০০ আসনের মধ্যে ১২৭টিতে একক প্রার্থী থাকায় এসব নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণের দরকার হবে না। ফলে আওয়ামী লীগের ১১৬, জাতীয় পার্টির ৫, ওয়ার্কার্স পার্টির ২, জাসদের (ইনু) ৩ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশে তাঁর দলের অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাত ১০টায় নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তাঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সংখ্যা শতাধিক। তবে নির্বাচনে এখন প্রার্থীর সংখ্যা কত, সেই হিসাব কমিশন সচিবালয় দিতে পারেনি।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১৬টি দল। এগুলো হলো: আওয়ামী লীগ, জাপা, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)।
এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে মোট এক হাজার ১০৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ২৬০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। ১৩৮ জন রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আবেদন করেন। কমিশন শুনানি শেষে ৪২ জনের আবেদন মঞ্জুর করে।
আওয়ামী লীগের যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন: ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দবিরুল ইসলাম, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ, রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান, গাইবান্ধা-৫ ফজলে রাব্বী মিয়া, বগুড়া-১ আবদুল মান্নান, বগুড়া-৫ হাবিবুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ গোলাম রাব্বানী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আবদুল ওদুদ, নওগাঁ-৬ ইসরাফিল আলম, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ এনামুল হক, নাটোর-১ আবুল কালাম, নাটোর-২ শফিকুল ইসলাম, নাটোর-৪ আবদুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ-১ মোহাম্মদ নাসিম, সিরাজগঞ্জ-২ হাবিবে মিল্লাত, সিরাজগঞ্জ-৩ ইসহাক হোসেন তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-৪ তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৬ হাসিবুর রহমান, যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন, বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দীন, বাগেরহাট-২ মীর শওকত আলী, বাগেরহাট-৩ তালুকদার আবদুল খালেক, ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম, বরিশাল-১ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-৬ আবদুল হাফিজ মল্লিক, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, পিরোজপুর-১ এ কে এম এ আউয়াল, টাঙ্গাইল-১ আবদুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-৩ আমানুর রহমান খান, টাঙ্গাইল-৪ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল-৭ একাব্বার হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ শওকত মোমেন শাহজাহান, জামালপুর-৩ মির্জা আজম, ময়মনসিংহ-১ প্রমোদ মানকিন, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ-৯ আনোয়ারুল আবেদীন খান, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-২ সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৪ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৬ নাজমুল হাসান, মানিকগঞ্জ-২ মমতাজ বেগম, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, মুন্সিগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা-২ কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১১ এ কে এম রহমত উল্লাহ, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ আসলামুল হক, ঢাকা-১৯ এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ এম এ মালেক, গাজীপুর-১ আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ রহমত আলী, গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ, নরসিংদী-৪ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, নরসিংদী-৫ রাজিউদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ জিল্লুল হাকিম, ফরিদপুর-১ আবদুর রহমান, ফরিদপুর-২ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ফরিদপুর-৩ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাদারীপুর-১ নূর-ই আলম চৌধুরী, মাদারীপুর-২ শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শরীয়তপুর-১ বি এম মোজাম্মেল হক, শরীয়তপুর-২ শওকত আলী, শরীয়তপুর-৩ নাহিম রাজ্জাক, সুনামগঞ্জ-২ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সিলেট-১ আবুল মাল আবদুল মুহিত, মৌলভীবাজার-৩ সৈয়দ মহসীন আলী, মৌলভীবাজার-৪ আব্দুস শহীদ, কুমিল্লা-৭ আলী আশরাফ, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মুস্তফা কামাল, চাঁদপুর-১ মহীউদ্দীন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর-৩ দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ শামসুল হক ভূঁইয়া, চাঁদপুর-৫ রফিকুল ইসলাম, ফেনী-২ নিজামউদ্দিন হাজারী, নোয়াখালী-১ এ এইচ এম ইব্রাহীম, নোয়াখালী-২ মোরশেদ আলম, নোয়াখালী-৩ মামুনুর রশীদ, নোয়াখালী-৪ একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, লক্ষ্মীপুর-৩ এ কে এম শাহাজাহান কামাল, চট্টগ্রাম-৭ হাছান মাহমুদ, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ সাইমুম সরওয়ার, চট্টগ্রাম-১ মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৬ ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আফছারুল আমীন, চট্টগ্রাম-১৪ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, সাতক্ষীরা-৩ আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ জগলুল হায়দার, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, নেত্রকোনা-৪ রেবেকা মোমিন, নেত্রকোনা-৫ ওয়ারেসাত হোসেন, নওগাঁ-১ সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ শহীদুজ্জামান সরকার, নীলফামারী-২ আসাদুজ্জামান নূর, জয়পুরহাট-১ সামছুল আলম, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ, পাবনা-২ খন্দকার আজিজুল হক, পাবনা-৪ শামসুর রহমান ও পাবনা-৫ গোলাম ফারুক খোন্দকার।
জাতীয় পার্টি: চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার, ময়মনসিংহ-৫ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-২ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
জেপি: পিরোজপুর-২ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
ওয়ার্কার্স পার্টি: ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ ফজলে হোসেন বাদশা।
জাসদ: কুষ্টিয়া-২ হাসানুল হক ইনু, চট্টগ্রাম-৮ মঈন উদ্দীন খান বাদল ও ফেনী-১ শিরীন আখতার।
তিন দলের ১০ জনকে নৌকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠিতে জোটবদ্ধ প্রার্থী হিসেবে তিনটি দলের ১০ জন প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে যাঁদের ‘নৌকা’ দিতে বলা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
এরশাদ প্রার্থী আছেন: রংপুর ও লালমনিরহাটে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, তাঁর ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরসহ দলের পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। ফলে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও রংপুর-৩ ও লালমনিরহাট-১ আসনে এরশাদের এবং লালমনিরহাট-৩ আসনে জি এম কাদেরের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।
কমিশন সচিবালয় জানিয়েছে, এরশাদ ও জি এম কাদেরের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ব্যক্তি মারফত জমা দিলেও দুই প্রার্থী জমাকারীকে লিখিতভাবে ক্ষমতা দেননি। যে কারণে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৬ ধারা অনুযায়ী, প্রার্থীকে নিজে উপস্থিত থেকে অথবা লিখিতভাবে ক্ষমতা দেওয়া ব্যক্তির মাধ্যমে প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিতে হবে। ঢাকা-১৭ আসনে এরশাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়েছে।