রেলস্টেশনের জায়গা ভরাটের পর এবার দোকান নির্মাণ

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনে মেইন লাইন ও লুপ লাইনের মাঝের জলাশয় ভরাটের পর এবার সেখানে দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে লাকসাম-নোয়াখালী রেললাইন।

হকার্স মার্কেট নাম দিয়ে লাকসাম পৌরসভা দুই মাস ধরে দোকানপাট নির্মাণ করছে। দোকানপাট নির্মাণের কারণে ট্রেন ক্রসিং করার একটি লুপ লাইন মাটির নিচে চাপা পড়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, দুটি রেললাইনের মধ্যবর্তী স্থানে জায়গা ভরাট করে স্থাপনা তৈরির কোনো সুযোগ নেই। রেলওয়ের এ জায়গা সরকার কাউকে ইজারাও দিতে পারে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই এ কাজ হচ্ছে। এর ফলে ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। আগে এখানে ট্রেন ক্রসিং করা যেত। এখন ভরাটের কারণে লুপ লাইন মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। এখানে আর ট্রেন ক্রসিং করা যাবে না। ট্রাফিক কাজও হবে না। এ কারণে লাকসাম-নোয়াখালী রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত সোমবার বিষয়টি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত শুক্রবার দুপুরে দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ভরাট হওয়া জায়গায় ইট দিয়ে দোকানের জন্য ভিটা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে ডাকাতিয়া নদী থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। লোহার পাত দিয়ে

টিন লাগানোর কাজ হচ্ছে। তিনজন শ্রমিক বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে টিন লাগানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৌলতগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখানে হকার্স মার্কেট, কাঁচাবাজার ও যানবাহন রাখার স্থান করা হলে রেললাইনে নিরাপদ ট্রেন চলাচল ও স্টেশনে ট্রেন ক্রসিং এবং বাণিজ্যিক কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।

স্টেশনমাস্টার আবদুল মান্নান চৌধুরী আরও বলেন, ‘গত বছরের ১০ অক্টোবর লাকসাম পৌরসভা ড্রেজার মেশিন (খনন যন্ত্র) দিয়ে রেলস্টেশন ভবনের পাশসহ এর প্রায় ৩০০ মিটার উত্তর-দক্ষিণের খালি জায়গা ও জলাশয় ভরাট শুরু করে। ১২ অক্টোবর লাকসাম রেলওয়ে থানা-পুলিশ এতে বাধা দেয়। ২৭ অক্টোবর রেলস্টেশনের অদূরে ডাকাতিয়া নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে আবার ভরাট শুরু করা হয়। নভেম্বরের মধ্যে ভরাট শেষ হয়। তখন একাধিকবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। সর্বশেষ গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ভরাট হওয়া জায়গায় দোকানপাট নির্মাণ শুরু হয়। এ জায়গার খাজনা আমরা পৌরসভাকে দিয়ে থাকি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই। পৌরসভার উদ্যোগেই ওই কাজ হচ্ছে।’

এ নিয়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘মার্কেট নির্মাণে জলাশয় ভরাট’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।

এসব বিষয়ে লাকসাম পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের বলেন, ‘হকার্স সমিতির মাধ্যমে দোকান নির্মিত হচ্ছে। রেললাইনের ওপর যাঁরা দোকান নিয়ে বসে থাকেন কিংবা ফুটপাতে যাঁরা বেচাকেনা করেন, এমন ভাসমান হকারদের জন্য এসব দোকান হচ্ছে। এখানে অন্তত ২০০ দোকান করা হবে।’