অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের সংশোধনী বাতিলের দাবি

দফায় দফায় সংশোধনের নামে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনকে প্রত্যর্পণ নয়, অর্পিত সম্পত্তি গ্রাস বা উচ্ছেদ আইনে পরিণত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ মে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তা জনস্বার্থবিরোধী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সমস্ত আইনকে অকার্যকর করেছে। তাই অবিলম্বে এই সংশোধনী বাতিল করতে হবে।

গতকাল শুক্রবার ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংশোধনের ১৮ মাস, বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এবং মাঠপর্যায়ের সমস্যা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক গোলটেবিল আলোচনায় এই দাবি করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে তিন পর্বে বিভক্ত এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। আলোচনায় বেশির ভাগ বক্তা নতুন তালিকা, বিভিন্ন কমিটি এবং সংশোধনের নামে আইনে যে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সমাধান দাবি করেছেন। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পর নতুন কোনো সম্পত্তি অর্পিত হিসেবে গণ্য করা হবে না বলে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা বহাল করারও দাবি জানান তাঁরা।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সংশোধনীতে প্রতি উপজেলায় ক ও খ গেজেটের বাইরে অতিরিক্ত গেজেট করা হয়েছে। যে গেজেটে নতুন সম্পত্তির তালিকা থাকবে। কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির বাইরে নতুন করে বিভাগীয় কমিটি করে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আগে জেলা জজকে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল চালু করা হয়েছিল। নতুন সংশোধনীতে জেলা জজকে দিয়ে আপিল ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। সহকারী জেলা জজ ও যুগ্ম সহকারী জজকে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।   

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন নিজেরা করির সমন্বয়ক ও এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির। দ্বিতীয় পর্বে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায় এবং তৃতীয় পর্বে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য সরকারের নেই। হয়রানি ও সমস্যা ছাড়া দ্রুততার সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সম্পত্তি ফেরত পেতে প্রয়োজনে আইনের আরও সংশোধনী আনা হবে বলে আশ্বাস দেন তথ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অর্পিত সম্পত্তির যে আইনটি হয়েছে তার ভিত্তিটাই ছিল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক।

অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেন, গত ৫ মে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যে সংশোধন হয়েছে, তা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ নয়, অর্পিত সম্পত্তি গ্রাস।

আগামী নির্বাচনের আগেই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের বিষয়টি সুরাহা করার দাবি জানান অজয় রায়।

রানা দাশগুপ্ত তাঁর বক্তব্যে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানান।

অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, এই আইনে নতুন নতুন সংশোধনী এনে কীভাবে ভুক্তভোগীরা আরও নিঃস্ব হবেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যাঁরা আইনটি প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী তবারক হোসেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ১৯৭৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার আলোকে এখন একটি নির্বাহী আদেশ দেওয়া হলে সমস্যার সমাধান হতে বাধ্য।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সাবেক বিচারপতি আওলাদ আলী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এ্যারোমা দত্ত, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা রেজাউল করীম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংবাদিক সোহরাব হাসান প্রমুখ। সারা হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার জন্য বক্তব্য দেননি।: