যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শহরের বৃন্দাবনপাড়ার স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা ও তাঁর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সবুজ (২১) নিহত হন।

নিহত ইব্রাহীম আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বাংলা বিভাগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া কাহালু উপজেলার নহড়াপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলামের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের বাদুড়তলা এলাকা থেকে রিকশায় ওঠেন আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির আহমেদের ছোট ভাই রিপন আহমেদ। রিপন ওই কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। কলেজের পুরোনো ভবন (ফুলবাড়ী) পর্যন্ত ৪০ টাকা ভাড়া ঠিক হলেও রিপন ২০ টাকা দিলে রিকশাচালকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা বাধে। এ সময় রিপন রিকশাচালককে মারধর করেন। সেখানে উপস্থিত শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের এক কর্মী রিকশাচালকের পক্ষ নিয়ে রিপনকে মারধর করেন। রিপন বিষয়টি তাঁর বড় ভাই বেনজির আহমেদকে জানালে বেনজিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানে যান। তাঁরা যুবলীগ নেতা নুরুলের ওই কর্মীকে কলেজ ক্যাম্পাসে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে নুরুল সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ওই কর্মীকে উদ্ধার করতে যান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নুরুল এবং তাঁর সহযোগীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীম হোসেনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। আহত ইব্রাহীমকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, রিকশাভাড়া নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো বিবাদ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীমকে খুন করিয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছোড়ে। বগুড়া স্টেডিয়াম ফাঁড়ি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই‍) আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সেখানে কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় ও তাঁর মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার জের ধরে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বগুড়া শহরের সাতমাথা অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল গিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক সন্ধ্যায় অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা ইব্রাহীমকে হত্যা করেছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার এবং জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে শুক্রবার জেলা ছাত্রলীগ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

সন্ধ্যায় বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র ২০ টাকা রিকশা ভাড়া কম দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সামনে নয়, পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ছাত্রলীগ বৃন্দাবনপাড়ার গলিতে ঢুকে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ সত্য নয়।’